অল্প পুজিতে পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া সেরা ৫টি
বর্তমানে ব্যবসায়ের চাহিদা অনেক বেশি। আপনি যদি কম পরিশ্রম করে অনেক টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে আপনাকে পাইকারি ব্যবসার উপরে নজর দিতে হবে। এই লেখাটিতে অল্প পুজিতে পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনারা খুচরা ব্যবসার থেকে অনেক বেশি সুবিধা পাবেন। এই ব্যবসায় তেমন বেশি পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না, স্বল্প পরিশ্রম করে এবং সঠিক নিয়ম মেনে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারলে প্রতিমাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
অল্প পুজিতে পাইকারি ব্যবসা
বর্তমানের পরিস্থিতিতে অল্প পুজিতে লাভজনক পাইকারি ব্যবসাগুলো হল কাগজের প্যাকেট তৈরি করা, মুদি মালামাল পাইকারি বিক্রয়, স্টেশনারি পণ্য পাইকারি বিক্রয়, বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা ও কসমেটিক্স মালামালের ব্যবসা।
সাধারণত পাইকারি ব্যবসা বলতে বুঝায় উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পাইকারি হিসেবে অল্প দামে পণ্য ক্রয়করে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা। তথা যারা পণ্য উৎপাদন করে তাদের কাছ থেকে অল্প দামে কিনেএনে খুচরা বিক্রেতা বা দোকানদারের কাছে বিক্রি করা।
এই ব্যবসায় আপনি অনেক বেশি লাভ করতে পারবেন কেননা, এই ব্যবসায় অল্প সময় ইনভেস্ট করে আপনি অনেক মালামাল বিক্রয় করতে পারবেন। খুচরা ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় এবং অনেক পরিশ্রম করতে হয়।
কিন্তু পাইকারি ব্যবসা এর সম্পূর্ণ বিপরীত, এখানে অল্প সময়ে পরিশ্রম করে অনেক মালামাল বিক্রি করতে পারবেন, এবং অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তাই বর্তমান সময়ে লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে পাইকারি ব্যবসা অন্যতম।
চলুন উপরে উল্লেখিত বর্তমান সময়ে লাভজনক কয়েকটি পাইকারি ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
১.কাগজের প্যাকেট তৈরি
কাগজের ঠোঙ্গা বা প্যাকেটের সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত আছি। সাধারণত মুদি মালামাল কিংবা রেস্টুরেন্টের খাবার প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রে কাগজের প্যাকেট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এই প্যাকেট গুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার হয়।
কাগজের প্যাকেট ব্যবহারের ফলে আমাদের পরিবেশের ক্ষতি সাধন হয়না। ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের দিকে কাগজের প্যাকেটের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। এরপরে আস্তে আস্তে পলিথিন প্যাকেটের চলাচল শুরু হয়।
সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ
কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে মানুষ পরিবেশ সতর্ক হওয়ায় পুনরায় কাগজের প্যাকেট এর চলন শুরু হয়েছে। মাত্র ৫০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সরাসরি নিজেদের কারখানায় প্যাকেটগুলো তৈরি করে অথবা কারখানা থেকে ক্রয় করে পাইকারি বিক্রি করতে পারেন।
২.মুদি মালামাল বিক্রয়
মুদি মালামাল ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করা খুবই সহজ। অথবা আপনি শহরে একটি দোকান স্থাপন করে গোডাউন থেকে বা উৎপাদনকারীর কাছ থেকে মালামাল ক্রয় করে এনে পাইকারি ভাবে বিক্রি করতে পারবেন। সাধারণত খুচরা দোকানদাররা এই সকল পাইকারি দোকান থেকে মালামাল ক্রয় করে নেয়।
মুদি মালামাল বলতে চাল, গম, আটা, হলুদ ও মরিচ, গরম মসলা ইত্যাদি এই সকল মালামাল গুলো বুঝায়। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কমপক্ষে ১,০০,০০০ টাকা মূলধন প্রয়োজন হবে। এই ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই একটি দোকান/গোডাউন ভাড়া নিয়ে রাখতে হবে।
৩.স্টেশনারি পণ্য বিক্রয়
অন্যান্য সকল ব্যবসার তুলনায় এটি একটি ইউনিক বিজনেস আইডিয়া। যদি আপনি ভালোভাবে স্টেশনারি পণ্য নিয়ে পাইকারি ব্যবসা করতে পারেন, তাহলে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা লাভবান হতে পারবেন।
বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিয়ত অনেক কাগজ, কলম, রুলার, রাবার, চক, পিন মেশিন ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। এই ব্যবসাটি শুরু করতে তেমন পুঁজি প্রয়োজন হয় না।
তাই আপনি যদি একটি ইউনিক পাইকারি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আমি সর্বপ্রথম স্টেশনারি পণ্য বিক্রয় সাজেস্ট করব। বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে এনে ছোট বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দামে স্টেশনারি পণ্যগুলো বিক্রয় করতে পারবেন। এই পণ্যগুলো কোথা থেকে পাইকারি সংগ্রহ করবেন তা জানতে পারেন।
৪.বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা
গ্রামের তুলনায় শহরে বসে এই ব্যবসাটি বেশি লাভজনকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব। বাচ্চাদের খেলনার ব্যবসা অন্যতম একটি ইউনিক ব্যবসা আইডিয়া। মাত্র ৫০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করে বড় পরিসরে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন।
সরাসরি চায়না থেকে নতুন নতুন বাচ্চাদের খেলনাগুলো ইমপোর্ট করে খুব সহজে বিক্রয় করতে পারবেন। অথবা যারা চায়না থেকে এই ধরনের মালামাল ইমপোর্ট করে তাদের থেকে অল্প দামে এগুলো ক্রয় করে পাইকারি দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রয় করতে পারবেন।
৫.কসমেটিক্স মালামালের ব্যবসা
বর্তমান সময়ে সবথেকে লাভজনক ব্যবসা হল কসমেটিক্স মালামালের ব্যবসা। এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে কমপক্ষে ১ থেকে ৩ লক্ষ টাকা মূলধন রাখতে হবে। চকবাজার এবং বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে কসমেটিক্সের মালামাল গুলো অল্প দামে ক্রয় করে এনে,
বাজারের/ মার্কেটের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রয় করতে পারবেন। বর্তমানে কসমেটিক্স মালামালের চাহিদা আকাশচন্ডী, তাই এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজে একটি পাইকারি লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন।
সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ
পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা প্রয়োজন
সাধারণত অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেননা। কেননা এই ব্যবসা করার জন্য উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে অল্প দাম দিয়ে হলেও অনেক বেশি পণ্য ক্রয় করতে হবে। তাই একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা প্রয়োজন।
এছাড়াও যদি কোন উৎপাদনকারী আপনার পরিচিত থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি অন্যভাবে পরিচালনা করতে পারেন। যেমন তার কাছ থেকে মালামাল এনে প্রথমে বিক্রি করে এরপরে উৎপাদনকারীর টাকা পরিশোধ করবেন।
তবে সকলের ক্ষেত্রে এই সুযোগটি প্রযোজ্য হবে না। তাই একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা মূলধন রাখবেন।
সহজে পাইকারি ব্যবসায় লাভবান হওয়ার উপায়
পরিশ্রম ব্যতীত কোন ব্যবসায় লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি পাইকারি ব্যবসায় যদি আপনি লাভবান হতে চান বা সফলতা পেতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং এই ব্যবসায়ের দিকে ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।
ব্যবসায় সফল হওয়ার অন্যতম একটি মূলমন্ত্র হলো সততা বজায় রাখা। আপনি যদি একজন সৎ ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে একটু দেরিতে হলেও এই ব্যবসায় সফল হবেন। আর পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে সবসময় ভালো মালামাল গুদামজাত বা সংগ্রহ করতে হবে।
এবং অন্যান্য পাইকারি বিক্রেতাদের থেকে কম দামে মালামাল বিক্রি করতে হবে। তবে অবশ্যই মালামালের ন্যায্য দাম বজায় রাখতে হবে। মনে করেন আপনি একটি পাইকারি মাল ২৫০ টাকায় ক্রয় করলে। ওই মালটির ন্যায্য দাম ২৭০ টাকা। কিন্তু অন্যান্য পাইকারি বিক্রেতারা বিক্রি করে ২৮০-৯০ টাকায়।
তাহলে আপনি ওই মালামালটি একেবারে ন্যায্য দাম ২৭০ টাকায় বিক্রি করবেন। এভাবে যদি সততা বজায় রেখে এই ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে আশা করি খুব দ্রুত পাইকারি ব্যবসায় লাভবান হবেন।
FAQs
পাইকারি ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে ভালো মালামাল নির্বাচন করতে। এরপরে সঠিক স্থান নির্বাচন করে একটি গোডাউন তৈরি করুন। এবং সততার সাথে নায্য দামে মালামাল গুলো বিক্রয় করলে খুবদ্রুত এই ব্যবসায় সফল হবেন।
উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে অল্প দামে অনেক মালামাল ক্রয় করে এনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করাকে পাইকারি ব্যবসা বলা হয়।