Business Career

কৃষি ব্যবসা আইডিয়া (সেরা ৮টি)

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ, আমাদের দেশের মাটি অনেক উর্বর হওয়ার ফলে এই দেশে খুব সহজে অধিক পরিমাণেই কৃষি পণ্য উৎপাদন করা যায়। এই লেখাটিতে বর্তমান সময়ের লাভজনক কয়েকটি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আমাদের দেশের বাজারে এবং ইন্টারন্যাশনাল বাজারে কৃষি পণ্যর চাহিদা অনেক বেশি। যেহেতু কৃষিকাজের জন্য আমাদের দেশের মাটি অনেক উর্বর সেহেতু আমরা এই উর্বরতা কাজে লাগিয়ে কৃষি ব্যবসা শুরু করতে পারি।

এই লেখাটিতে বর্তমান সময়ের লাভজনক কয়েকটি কৃষি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানানো হবে। সঠিকভাবে এই ব্যবসা গুলো করে খুব সহজেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন। চলুন জেনে নেই –

লাভজনক কয়েকটি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া

লাভজনক কয়েকটি কৃষি ব্যবসা আইডিয়া গুলো হল মাশরুম চাষ করা, সূর্যমুখী ফুল চাষ করা, ফল উৎপাদন, দুধ ও ডিম উৎপাদন, বিভিন্ন গাছের চারা তৈরি তথা নার্সারি, মাছ চাষ করা, ফুলের চাষ ও ফুলের ব্যবসা, মৌমাছি চাষ ইত্যাদি।

কৃষি ব্যবসা করার জন্য আপনাকে প্রথমে যেকোনো একটি ব্যবসা নির্ধারণ করতে হবে এবং উক্ত ব্যবসা এবং ফসল চাষ সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে খুব স্বল্প সময়ে খুব সহজে আপনি এই ব্যবসায় সফল হতে পারবেন।

১.মাশরুম চাষ করা

মাশরুম একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। বর্তমানে অনেক বড় হোটেল/রেস্টুরেন্ট, সুপার শপ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গুলোতে মাশরুম বিক্রি হয়। বর্তমানে মাশরুম খাবারের চাহিদা অনেক বেশি। আপনি মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে মাশরুমের চাষ শুরু করতে পারবেন।

মাশরুম চাষের অনেক সুবিধা আছে যেমন মাশরুম চাষ করার জন্য আপনার তেমন কোন আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না আপনি ঘরে বসে অল্প একটু জমিতে মাশরুম চাষ করতে পারবেন। এবং মাশরুম তৈরি হইতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে।

মাশরুম চাষের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ঝুঁকি নেই, যদি আপনি মাশরুম চাষ সম্পর্কে না জানেন তাহলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ইনস্টিটিউট থেকে মাশরুম চাষ সম্পর্কে জানতে পারবেন। বর্তমানে লাভজনক কৃষি ব্যবসা গুলোর মধ্যে মাশরুম চাষ অন্যতম।

২.সূর্যমুখী ফুল চাষ

সূর্যমুখী ফুল অনেক দ্রুত সময়ে বড় হয়, এবং সঠিক পরিচর্যায় অনেক বেশি ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুল দিয়ে মূলত তৈল তৈরি হয়। ফুলের বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার ফলে অনেকে সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে আগ্রহী হন।

সূর্যমুখী ফুলের ফলন পেতে ৩ থেকে ৪ মাস সময় প্রয়োজন হয়। সাধারণত সূর্যমুখী ফুলের চাষ বর্ষাকালে বেশি হয়ে থাকে। বর্তমান বাজারে সূর্যমুখী ফুলের তৈলের অনেক চাহিদা আছে। সরকারিভাবে কৃষি দপ্তর থেকে সূর্যমুখীর বীজ প্রদান করে।

৩.ফল উৎপাদন

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ফরমালিনমুক্ত ফলের চাহিদা অনেক বেশি। আপনি যদি নিজে ফল উৎপাদন ফরমালিন মুক্ত অবস্থায় বাজারজাত করতে পারেন তাহলে এই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আর্টিকেলঃ

ফলের চাষ করার জন্য আলাদা আবাদি উর্বর জমি প্রয়োজন হবে। সাধারণত গ্রাম-অঞ্চলে সিজনী ফল হিসেবে আম, কাঠাল, পেয়ারা, মালটা, বড়ই, আঙ্গুর, নারিকেল, আপেল, স্ট্রবেরি, টমেটো, সবেদা, লিচু, জলপাই, আমলকি, তেতুল, কমলা, বেদানা, পেঁপে, কলা ইত্যাদি চাষ করতে পারেন।

স্থানভেদে এই ফলগুলো চাষ করা যায়। তবে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সব ধরনের ফল চাষ হয় না কেননা একে’ক জায়গার মাটি ভিন্নরকম। তাই আপনার এলাকার মাটি অনুযায়ী যেকোন ফলের চাষ করতে পারেন।

৪.ডিম ও দুধ উৎপাদন

ডিম ও দুধ উৎপাদন কৃষি ব্যবসার অন্তর্ভুক্ত, বিশেষ করে গ্রামে যারা বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি অনেক লাভজনক ও সুবিধাজনক। হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে স্বল্প খরচের ডিম উৎপাদন করতে পারেন এবং গরু ছাগল পালনের মাধ্যমে স্বল্প খরচে দুধ উৎপাদন করতে পারেন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ডিম ও দুধের চাহিদা অনেক বেশি।

ডিম উৎপাদনের জন্য স্বল্প খরচে কিছু হাঁস মুরগি ক্রয় করে পালন করতে পারেন। যদি ছোটপরিসরে একটি মুরগির বা হাঁসের খামার করতে চান তাহলে মিনিমাম ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হবে। হাঁস মুরগি পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই হাঁস মুরগি থাকার জায়গা, খাবার এবং রোগ-বালাই দিকে নজর রাখতে হবে।

তবে গরু-ছাগল পালনের জন্য আপনাকে বেশি টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। গরু ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বেশি সময় নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে হবে এবং এই ব্যবসায় দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি গরু ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

৫.নার্সারি করা

এখানে নার্সারীর ব্যবসা বলতে বুঝানো হয়েছে চারা উৎপাদন, কৃষি কাজের জন্য কৃষকরা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের কৃষি পণ্য বা ফল গাছের চারা ক্রয় করে। আপনার যদি নার্সারি সম্পর্কে ধারণা থাকে বা চারা উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি করতে পারেন।

নার্সারি ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে গাছ উৎপাদন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। স্বল্প জায়গায় গ্রামে অথবা শহরে যেকোন স্থানে বসে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ফল গাছের পাশাপাশি ফুল গাছের চারা উৎপাদন করতে পারেন। বর্তমানে ফলের পাশাপাশি ফুলের অনেক বেশি চাহিদা রয়েছে।

৬.মাছ চাষ করা

মাছ চাষের ব্যবসার সাথে আমরা কম বেশি সকলে অবগত আছি। এই ব্যবসা আইডিয়া যারা গ্রামে বসবাস করে তাদের ক্ষেত্রে অনেক উপকারী হবে। কেননা গ্রামে অনেক পুকুর থাকে যেখানে আপনারা ছোট মাছ ক্রয় করে লালন পালন করতে পারবেন।

যারা শহরে বসবাস করেন তাদের ক্ষেত্রে যদি পুকুর না পাওয়া যায় তাহলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন। বায়োফ্লক পদ্ধতি বলতে বুঝানো হয়েছে বড় জলের ট্যাংকের মধ্যে মাছ চাষ করা। বর্তমানে বাংলাদেশে মৎস্য শিল্পে বায়োফ্লক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বায়োফ্লক এর মাধ্যমে অল্প জায়গায় অধিক মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হয়। তবে বায়োফ্লক এর মাধ্যমে মাছ চাষ করতে অবশ্যই মাছের প্রতি অনেক বেশি খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমানে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে মাছের চাহিদা অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই আপনার ব্যবসার মূলধন বেশি হলে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে পারেন।

৭.ফুলের চাষ

বছরে প্রায় সবসময়ই ফুলের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে জন্মদিনের অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান, পুজো, স্পেশাল দিন, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি পালনের জন্য ফুল প্রয়োজন হয়। এছাড়াও অনেকে ঘরের সৌন্দর্য তৈরির জন্য প্রাকৃতিক ফুল ক্রয় করে।

গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ

তাই আপনি চাইলে সরাসরি ফুলের চাষ করতে পারেন, বাংলাদেশে অনেক ধরনের ফুলের চাষ হয় তার মধ্যে অন্যতম হলো গোলাপ ফুল, জবা ফুল, রজনীগন্ধা, গাধা, চন্দ্রমল্লিকা, চম্পা, দোলনচাঁপা, পলাশ ইত্যাদি।

বর্তমানে বড় শহর গুলোর পাশাপাশি ছোট শহরগুলোতেও ফুলের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আপনার যদি ফুল চাষ সম্পর্কে ধারণা থাকে এবং পর্যাপ্ত মূলধন থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।

৮.মৌমাছি চাষ

মৌমাছি চাষ বা পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো মধু উৎপাদন। মধু বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, বিশেষ করে ঔষধ তৈরিতে মধুর চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়াও অনেকে খাবারের সাথে, দুধের সাথে, মেডিকেল ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করে।

মৌমাছির চাষ বা পালনে সবথেকে বেশি সুবিধা হল, মৌমাছি চাষের জন্য আলাদা কোন জায়গার প্রয়োজন হয় না। আপনার বাসার ছাদে কিংবা উঠানে মৌমাছি চাষ করতে পারেন। মৌমাছির চাষের জন্য প্রথমে আপনার বাড়ির আঙিনায় কিছু ফুল ও ফল গাছ রোপণ করতে হবে যেখান থেকে মূলত মৌমাছিগুলো মধু সংগ্রহ করবে।

মৌমাছি চাষের জন্য প্রথমে কিছু ভালো মৌমাছির বাচ্চা সংগ্রহ করতে হবে। এবং চাষের সম্পূর্ণ পদ্ধতি কোন ট্রেইনার এর কাছ থেকে ট্রেনিং নিয়ে শুরু করতে পারেন অথবা ইউটিউবে মৌমাছি চাষ সম্পর্কে অনেক ভিডিও পাওয়া যায় এগুলো দেখতে পারেন।

ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়

প্রিয় পাঠকবৃন্দ উপরে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কয়েকটি লাভ জনক কৃষি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানানো হয়েছে। আপনি যদি এই ব্যবসা গুলোতে সফল হতে চান তাহলে প্রথমে ব্যবসার ধরন নির্ধারণ করতে হবে। এবং উক্ত ব্যবসা সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে ব্যবসা শুরু করতে হবে।

ব্যবসা করার জন্য প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে কোন স্থানে আপনি ব্যবসা করতে চান, এবং আপনার ব্যবসার মূলধনের উপর নির্ভর করে ব্যবসার সরঞ্জাম গোছাতে হবে। এবং ব্যবসায়ের প্রতি যথেষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে, ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যদি সৎভাবে আপনি ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে দ্রুত সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

FAQs

স্বল্প খরচে কৃষি ব্যবসার আইডিয়া?

স্বল্প খরচে গ্রামে কিংবা শহরে বসে মাশরুমের চাষ করতে পারেন অথবা মুরগি পালন করে ডিম উৎপাদন করতে পারেন।

১০০০ টাকার মধ্যে কৃষি ব্যবসার আইডিয়া?

১০০০ টাকায় কৃষি ব্যবসা করতে চাইলে আমি সাজেস্ট করব মুরগি পালন। বাজার থেকে একটি মুরগি ৩০০ বা ৪০০ টাকায় ক্রয় করে, সাথে ২০০ টাকার খাবার ক্রয় করলে মুরগিটি ৩-৪ মাস পালন করা যাবে। এবং এই সময়ের মধ্যে আশা করি মুরগিটির ডিম দেয়া শুরু করবে।

Business Of BD

হাই,ব্যবসা নিয়েই আমার পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই আমার ক্যারিয়ার। ব্যবসা নিয়ে লিখতে ভালবাসি, তাই ব্যবসা নিয়েই এই ব্লগটি করা।

Related Articles

Back to top button