Business Tips

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম ২০২৩

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসাকে রাজকীয় ব্যবসা বলা হয়। এই লেখাটিতে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা কিভাবে করবেন এবং এই ব্যবসা শুরু করতে কি কি প্রয়োজন? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা বলতে বুঝানো হয় মালামাল আমদানি ও রপ্তানি করা। বর্তমান সময়ে অন্য সকল দেশের তুলনায় এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসায় বাংলাদেশ পিছিয়ে নেই। ব্যক্তি পর্যায়ে থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কোম্পানি হিসেবে অনেক প্রতিষ্ঠান এই এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন হয়। অপরদিকে বাংলাদেশে তৈরি অনেক পণ্য বিদেশে বেশ জনপ্রিয় যেগুলো বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে বাহিরের দেশগুলোতে রপ্তানি করা হয়।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা কি?

এক্সপোর্ট বলতে বোঝানো হয় বাংলাদেশ থেকে কোন মাল বাহিরে তথা বিদেশে রপ্তানি করা। এবং ইমপোর্ট বলতে বোঝানো হয় বিদেশ থেকে কোন মাল বাংলাদেশে আমদানি করা। মালামাল আমদানি ও রপ্তানির এই প্রক্রিয়াকে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা বলা হয়।

ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে যে কেউ চাইলেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য একটি লাইসেন্স তৈরি করতে হবে অন্যথায় আপনার আমদানি ও রপ্তানি করা পণ্যগুলো অবৈধ বলে বিবেচিত হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করার জন্য প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ মার্কেট সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে, এবং আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনি কোন পণ্য নিয়ে এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা শুরু করবেন। এবং ব্যবসা করার জন্য পর্যাপ্ত মূলধন রাখতে হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করার আগে প্রথমে আপনাকে খোঁজ নিতে হবে আপনার নিকটস্থ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করে সফল ব্যবসায়ীকে। এবং তার কাছ থেকে সম্পূর্ণ প্রসেস সম্পর্কে জানতে হবে, এই ব্যবসায়ী কেমন লাভ হবে এবং কিভাবে এই ব্যবসা চালাতে পারেন।

সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পোস্টঃ

সাধারণত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা হলো বাংলাদেশের মার্কেট থেকে পাইকারি রেটে কোম্পানির কাছ থেকে পণ্যগুলো ক্রয় করে বিদেশে বিক্রি করা এবং বিদেশ থেকে পাইকারি রেটে কোম্পানির কাছ থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করে বাংলাদেশে বিক্রি করা।

অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা করে থাকে। যারা এই ধরনের ব্যবসা করে তাদের সাথে আপনার ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও আলিবাবা ও এমাজন এর মত বড় মার্কেটপ্লেসগুলোতে সেলার হিসেবে এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করতে পারেন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করতে কি কি প্রয়োজন?

আপনারা যদি এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কিছু জিনিস সংগ্রহ করে রাখতে হবে অন্যথায় আপনারা সফলভাবে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না।

  • ব্যবসা করার জন্য সঠিক পণ্য নির্বাচন করতে হবে।
  • পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য একটি ট্রেড লাইসেন্স করাতে হবে।
  • সঠিক উপায়ে ব্যাংকিং কার্যাবলী সফল করতে হবে, ব্যবসায়ের জন্য ব্যাংক একাউন্ট অবশ্যই প্রয়োজন।
  • যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে হবে, অল্প সময়ের মধ্যে বিদেশি কাস্টমারের সাথে কথা বলে কনভেন্স করার জন্য যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে।
  • যেহেতু আপনার এই ব্যবসা দেশ-বিদেশ উভয় স্থানে চলবে সেহেতু অবশ্যই আপনাকে ইন্টারন্যাশনাল ভাষা ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে।
  • এবং এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে একটি স্থান নির্ধারণ করতে হবে, যদি আপনারা জাহাজের মাধ্যমে মাল ইম্পোর্ট করাতে চান তাহলে জাহাজ বন্দরে আশেপাশে একটি জায়গা নির্ধারণ করে আপনাদের অফিস স্থাপন করবেন।
  • এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে বাংলাদেশ মার্কেট সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
  • পণ্য যাচাই এর পরে, বাংলাদেশ মার্কেট থেকে এই পণ্যটি আপনার কত টাকায় ক্রয় করতে হবে এবং বিদেশে মার্কেটে এই পণ্যটি আপনি কত টাকায় বিক্রয় করতে পারবেন, ঠিক একইভাবে বিদেশি মার্কেট থেকে একটি পণ্য কত টাকায় ক্রয় করে বাংলাদেশের মার্কেটে কত টাকা বিক্রি করতে পারবেন তা হিসাব করতে হবে।
  • ব্যবসা করার পূর্বে অবশ্যই মূলধন গুছিয়ে রাখতে হবে।
  • সোশ্যাল কানেক্টিভিটির জন্য একটি অফিসিয়াল ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন।
  • এবং আপনাদের ব্যবসার প্রচারণার স্বার্থে অফিশিয়াল ফেসবুক একাউন্ট ও instagram একাউন্ট চালু করতে পারেন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অবশ্যই আপনাকে উপরের এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট এর ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো যোগাযোগ নিশ্চিত করা।

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা করার জন্য যোগাযোগ নিশ্চিত করুন

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা করার জন্য প্রথমে আপনাকে যেই দেশে ব্যবসা করতে চান সেখানে বড় কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে হবে। মনে করেন আপনি আমেরিকায় ব্যবসা করতে চাচ্ছেন সেক্ষেত্রে আমেরিকার কোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

সাধারণত নতুন যারা আমদানি ও রপ্তানি বা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট এর ব্যবসা করতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বাধা যোগাযোগ। নতুন এই ব্যবসায় এসে যোগাযোগ স্থাপন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আপনারা প্রথমে কোন ইমপোর্ট ও এক্সপোর্ট কোম্পানির পার্টনার হয়ে কাজ করতে পারেন।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করার নিয়ম

এক্সপোর্ট ও ইমপোর্ট ব্যবসা করার জন্য লাইসেন্স করতে হবে অবশ্যই। যেহেতু আপনারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্য আনা-নেয়া করবেন সেহেতু লাইসেন্স অবশ্যই প্রয়োজন হবে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করার জন্য প্রথমে ট্রেজারি চালানোর মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, এরপরে আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়ে সীলমোহর সম্মলিত আবেদন পত্র আপলোড করুন।

বাংলাদেশ আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর এই লাইসেন্স বিতরণ করে থাকে, যদি আপনি সঠিকভাবে উপযুক্ত প্রমাণ পত্র সহ আবেদনটি জমা করেন তাহলে উপরে উল্লেখিত দপ্তর আবেদনের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে এই লাইসেন্স ইস্যু করে।

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই লেখাটির মাধ্যমে।

FAQs

এক্সপোর্ট ইমপোর্ট লাইসেন্স করতে কত টাকা লাগে?

এক্সপোর্ট লাইসেন্স করতে সরকারি নির্ধারিত ফি ৭,০০০ টাকা। ইমপোর্ট লাইসেন্স করাতে সরকারি নির্ধারিত ফি ৬টি ক্যাটাগরিতে হয়ে থাকে। এটা নির্ধারণ করা হয় আমদানির/ইমপোর্ট এর মূল্য সীমার উপর ভিত্তি করে।
৫ লক্ষ টাকা মূল্যসীমা জন্য ৫০০০ টাকা ফি, ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যসীমা হলে ১০০০০ টাকা ফি, ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যসীমা হলে ১৮০০০ টাকা ফি, ১ কোটি টাকা মূল্যসীমা হলে ৩০০০০ টাকা ফি, ৫ কোটি টাকা মূল্যসীমা হলে ৪৫০০০ টাকা ফি এবং ৫ কোটির উর্ধ্বে হলে ৬০০০০ টাকা ফি।

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা কি?

আমদানি ও রপ্তানি ব্যবসা হল বিদেশ থেকে বাংলাদেশে মাল আনা এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মাল পাঠানো। তথা আমদানি বলতে বোঝানো হয় অন্য কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে কোন পন্য ক্রয় করে আনা অপরদিকে রপ্তানি বলতে বোঝানো হয় বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য বিদেশে বিক্রি করা।

Business Of BD

হাই,ব্যবসা নিয়েই আমার পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই আমার ক্যারিয়ার। ব্যবসা নিয়ে লিখতে ভালবাসি, তাই ব্যবসা নিয়েই এই ব্লগটি করা।

Related Articles

Back to top button