পুরাতন কার্টুনের ব্যবসা করার নিয়ম
ফেলে দেওয়া কার্ডবোর্ডের বাক্সা বিক্রি করে আপনি মাসে লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। পুরাতন কার্ডবোর্ডের বাক্স গুলো স্বল্পদামে ক্রয় করে অধিক দামে বিক্রি করতে পারবেন। এই লেখাটিতে আলোচনা করবো পুরাতন কার্টুনের ব্যবসা সম্পর্কে।
পুরাতন কার্টুন নিয়ে ব্যবসার শুরু করে আপনি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবেন। পুরাতন কার্টুনের ব্যবসা করার সম্পূর্ণ নিয়ম সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি আপনার দেখা উচিত। বর্তমানে পুরাতন কার্টুন এর ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
পুরাতন কার্টুনের ব্যবসা
পুরনো কার্টুনের ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন এবং এই ব্যবসা শুরু করতে কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন হবে। ব্যবসা করার জন্য পুরাতন কার্টুনগুলো কিভাবে সংগ্রহ করবেন। ব্যবসায়ের জন্য মার্কেটিং কিভাবে করবেন ও কেমন প্রফিট মার্জিন করবেন।
এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্পূর্ণ লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আপনি যদি বেকার থাকেন! পছন্দের কোন ব্যবসার খুঁজে পাচ্ছেন না, যেই ব্যবসার মাধ্যমে আপনি প্রতি মাসে লক্ষ টাকার বেশি ইনকাম করতে পারবেন। তাহলে আপনি পুরনো কার্টুনের ব্যবসা করতে পারেন।
সাধারণত আমরা প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য যে সকল জিনিসপত্রগুলো ক্রয় করি, তার মধ্যে অধিকাংশ জিনিসপত্রগুলো কাগজের কার্টুনের মধ্যে মোড়ানো থাকে। জিনিসপত্র গুলো বাক্স থেকে বের করে সাধারণত আমরা বাক্সটি ফেলে দেই কিংবা পুড়িয়ে ফেলি। এই বাক্স গুলোকে নিয়ে আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
পুরনো কার্টুনের ব্যবসাটি কি রকমের
এই ব্যবসাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনি পুরনো কার্টুন বা কার্ডবোর্ডগুলো সংগ্রহ করে আনবেন এবং আপনার গোডাউনে স্টক করবেন। এরপরে এই মালামাল গুলো বাছাই করবেন বা রিসাইকেলিং করবেন পরবর্তীতে এগুলো টন হিসেবে কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্টে সাপ্লাই করবেন।
প্রথমত আপনাকে পুরনো কার্টুন বা কার্ডবোর্ড গুলো বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে এনে আপনার গোডাউনে জমা করতে হবে। এই মালামাল গুলো আপনারা ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে অল্প দামে কেজি মূলে ক্রয় করতে পারেন।
পরবর্তীতে মালামাল গুলোকে পরিষ্কার বা রিসাইকেল করে সঠিক ওজনে মাপ দিতে হবে। এরপরে এগুলোকে কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্টে সাপ্লাই করতে হবে।
এই ব্যবসা করার জন্য কি কি প্রয়োজন
একটি ব্যবসা শুরু করার পূর্বে, সঠিকভাবে ওই ব্যবসাটি চালানোর জন্য কি কি জিনিস প্রয়োজন হয় তা জেনে নেওয়া উত্তম। চলুন জেনে নেই পুরনো কার্টুনের ব্যবসার শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন।
- গোডাউনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা। যেখানে আপনার মালামাল গুলো স্টক করে রাখা হবে, গোডাউনের জন্য কমপক্ষে ৮০০ থেকে ২০০০ স্কয়ার ফিট জায়গা প্রয়োজন।
- হাইড্রোলিক লিভার। মালামাল গুলো আপনার গোডাউনে আসার পরে, এইগুলো যেন কম জায়গা নেয় এবং ট্রান্সপোর্টে কম জায়গা নেয় তার জন্য হাইড্রোলিক লিভারের মাধ্যমে এগুলোকে প্রেসার দিয়ে ছোট করা। ব্যবসার প্রথমদিকে অনেক দাম দিয়ে হাইডোলিক লিভার না কিনলেও চলবে।
- কয়েকজন শ্রমিকের ব্যবস্থা করা। কেননা মালামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে রিসাইকেলিং, সাপ্লাই, পেপার গুছানো, গাড়িতে লোড দেওয়া সহ যাবতীয় কাজ একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই এই সকল কাজগুলো করার জন্য প্রথম থেকে ২-৩ জন শ্রমিক ভাড়া করে নিতে হবে।
- ভাড়ার গাড়ির প্রয়োজন। গোডাউনে কার্টুনের বক্সগুলোকে রিসাইকেলিং প্লান্টে পাঠানোর জন্য রেডি করার পরে, ট্রান্সপোর্টের জন্য ভাড়ার গাড়ির প্রয়োজন হবে। আপনি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করে ভাড়ার গাড়ি রেডি করতে পারেন।
- পর্যাপ্ত ইনভেস্টমেন্ট। ব্যবসা করার জন্য সর্বপ্রথম যেই জিনিসটি প্রয়োজন হবে সেটি হল পর্যাপ্ত ইনভেস্টমেন্ট। এই ব্যবসা করার জন্য কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন হবে এই সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ ১০০ টি ব্যবসার আইডিয়া।
কার্টুনের বক্সগুলো কিভাবে সংগ্রহ করবেন
কার্টুনের বক্সগুলো সংগ্রহ করার জন্য আপনারা কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমে আপনারা বিভিন্ন ভাংড়িওয়ালা/ফেরিওয়ালার (যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরনো জিনিসপত্র কেজি দরে ক্রয় করে) সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন। তাদের কাছ থেকে কার্টুনের বক্সগুলো অল্প দামে কেজি হিসেবে ক্রয় করতে পারেন।
এরপরে বাজারের মুদি দোকান, বিভিন্ন ডেলিভারি কোম্পানির হাব, পুরনো বইয়ের দোকান, ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি ও ডিমের হোলসেলের দোকানগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কেননা এই সকল দোকানে প্রচুর পরিমাণে পুরাতন কার্টুনের বক্স পাওয়া যায়।
তাদের কাছ থেকে এগুলো অল্প দামে কেজি হিসেবে ক্রয় করে আনতে পারেন। এছাড়াও যারা মানুষের বাড়ি ক্লিন করে তাদের সাথে যোগাযোগ করে রাখতে পারেন।
পুরাতন কার্টুনগুলো কোথায় বিক্রি করবেন
পুরাতন কার্টুনগুলো সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াজাত করার পরে, এই কার্টুনগুলো বিক্রি করতে হবে। আমরা প্রথমেই জানিয়েছি পুরাতন কার্টুনগুলো কোথায় বিক্রি করবেন। পুরাতন কার্টুনগুলো সরাসরি টন হিসেবে কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্টে বিক্রি করবেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক জায়গায়ই কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্ট আছে। আপনি চাইলে তাদের সাথে যোগাযোগ করে দরদাম ঠিক করে টন হিসেবে পুরাতন কার্টুনগুলো বিক্রি করতে পারেন। এবার প্রশ্ন হল কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্ট কোথায় আছে কিভাবে জানবো?
এর জন্য আপনারা গুগল মামাকে ব্যবহার করতে পারেন, আপনি যদি গুগলে গিয়ে “carton recycling plant near me” লিখে সার্চ করেন তাহলে আপনার আশেপাশে যতগুলো কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্ট আছে তার লোকেশন দেখা যাবে।
এরপরে আপনার কাজ হল, গুগল ম্যাপ অনুযায়ী নিকটস্থ কার্টুন রিসাইকেলিং প্ল্যানগুলোতে যোগাযোগ করে পুরাতন কার্টুনের দাম সম্পর্কে জানা। এবং নায্য দামে কোন কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্ট এর কাছে পুরাতন কার্টুনগুলোকে বিক্রি করা।
এই ব্যবসায় কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন
যদি আপনার গোডাউনের জায়গা থেকে থাকে তাহলে প্রথমদিকে এই ব্যবসার শুরু করার জন্য কমপক্ষে ১,০০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা প্রয়োজন হবে। যদি গোডাউনের জায়গা না থাকে তাহলে উক্ত ইনভেস্টমেন্টের সঙ্গে গোডাউন ভাড়ার টাকা যোগ হবে।
এছাড়াও প্রথম দিকে হাইড্রোলিক লিভার মেশিন না কেনা উত্তম। যদি হাইড্রোলিক লিভার মেশিন কিনে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে পর্যাপ্ত ইনভেস্টমেন্ট এর সঙ্গে কমপক্ষে ২ লক্ষ টাকা বেশি যুক্ত করতে হবে। আশাকরি এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কত টাকা ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন হবে এই সম্পর্কে ধারণা পেয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ ব্যবসায় কিভাবে উন্নতি করা যায়।
পুরাতন কার্টুনের ব্যবসায় কেমন প্রফিট করতে পারবেন
আমাদের ব্যবসা করার মূল উদ্দেশ্য হল প্রফিট করা। পুরাতন কার্টুনের ব্যবসায় আপনি হিউজ পরিমাণের টাকা প্রফিট করতে পারবেন, যদি সঠিকভাবে এই ব্যবসাটি কন্টিনিউ করতে পারেন। সাধারণত এই ব্যবসায় প্রতি কেজি কার্টুনে ৫ থেকে ৬ টাকা লাভ হয়।
আপনি যদি হিসাব করেন তাহলে প্রতি টনে (১০০০ কেজি) প্রফিট করতে পারবেন ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা। এভাবেই প্রতিদিন ১০ টন মালামাল সাপ্লাই দিতে পারলে আপনার প্রফিট হবে কমপক্ষে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা।
লেবার খরচ, ট্রান্সপোর্ট খরচ, বিদ্যুৎ বিল, গোডাউন ভাড়া সহ অন্যান্য খরচ নিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে আপনার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা প্রফিট থাকবে।
আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি পুরনো কার্টুনের ব্যবসার কিভাবে করবেন এবং পুরনো কার্টুনের ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে এখনই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ফেলনা কাগজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন।
তবে এই ব্যবসা করার জন্য উদ্যোক্তাকে কঠোর পরিশ্রমী ও বুদ্ধিমান হতে হবে। কোন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে ওই ব্যবসা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা, রিলেটেড বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভিজিট করে আইডিয়া সংগ্রহ করা উত্তম।
FAQs
এই ব্যবসাটিকে বর্তমানে লাভজনক ব্যবসা গুলোর একটি বলা যায়। যদি আপনি সঠিকভাবে পুরাতন কার্টুন এর ব্যবসা করতে পারেন তাহলে অনায়েসে প্রতি মাসে ১,০০,০০০ টাকার বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
এটা জানার জন্য সরাসরি google এ গিয়ে “carton recycling plant near me” লিখে সার্চ করুন। গুগল মামা আপনাকে নিকটস্থ সকল কার্টুন রিসাইকেলিং প্লান্টের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিবে।