স্টক ব্যবসার আইডিয়া, রাতারাতি কোটিপতি হবেন আপনিও
বর্তমানে সকল লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে স্টক ব্যবসার আইডিয়া অন্যতম। বাংলাদেশের তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ চাকরির পিছনে দৌড়ে সময় নষ্ট না করে ওই সময়কে কাজে লাগিয়ে একটি সফল ব্যবসা দার করাতে চায়।
ওই সকল তরুণদের সুবিধার্থে আমাদের এই ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত ব্যবসা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। প্রতিদিনের মতো আজকের এই আর্টিকেলে আমাদের মূল লক্ষ হলো বর্তমান সময়ের লাভজনক কয়েকটি স্টক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানানো।
স্টক ব্যবসা কি? এবং কিভাবে শুরু করবেন?
স্টক বলতে বুঝানো হয় জমিয়ে রাখা তথা মজুদ করা। আর ব্যবসা শব্দের অর্থ আমরা সকলেই জানি। স্টক ব্যবসা বলতে বুঝানো হয় সিজনাল পণ্যগুলোকে স্টক করে তথা মজুদ করে বে-সিজনে নায্য মূল্যে বিক্রি করা।
এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে কেননা স্টক ব্যবসার মুনাফা সাথে সাথে পাওয়া সম্ভব নয়। হয়তোবা মজুদ করা পণ্যগুলো আপনাকে ৫ থেকে ৬ মাস পরে বাজারে বিক্রি করতে হবে। এই দীর্ঘ সময় পণ্যগুলো আপনার স্টকে থাকবে, এই সময়ে আপনি কোন ধরনের মুনাফা লাভ করতে পারবেন না।
তবে এই ব্যবসা করা সকলের পক্ষে সম্ভব শুধুমাত্র সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে এবং কখন এই মাল’টা বাজারে বিক্রয় করতে হবে এই সম্পর্কে জানলে আপনি স্টক ব্যবসা করতে পারবেন। সাধারণত স্টক ব্যবসায় ক্ষতির তুলনায় লাভ অনেক বেশি হয়। তাই আপনি চাইলে স্টক ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
সেরা কয়েকটি স্টক ব্যবসার আইডিয়া
স্টক ব্যবসার মূলমন্ত্র হলো সিজনাল পণ্যগুলো ক্রয় করে, এগুলো সঠিকভাবে মজুদ বা সংরক্ষণ করে বে-সিজনে নায্য মূল্যে বিক্রি করা। তবে পণ্যগুলো আপনাকে অবশ্যই সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে এগুলো নষ্ট না হয়। এবং বেসিজনে এগুলোকে নায্য মূল্যে বিক্রয় করতে হবে।
আমাদের আশেপাশে অনেক জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে আমরা স্টক ব্যবসা করতে পারি, এবং এই সকল ব্যবসাগুলো যদি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে আপনি লাখ লাখ টাকা মুনাফা লাভ করতে পারবেন।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাঃ হালাল ব্যবসার আইডিয়া।
১.আলুর স্টক ব্যবসা
আলু এমন একটি ফসল যেটি বাংলাদেশের প্রায় ৯০% ফ্যামিলির প্রতিনিয়ত রান্নার কাজে প্রয়োজন হয়। তবে বাংলাদেশে সারা বছর আলু উৎপন্ন হয় না। আমাদের দেশে শীতকালে বাজারে নতুন আলু পাওয়া যায়। অন্য সকল সিজনগুলোতে আলু উৎপন্ন হয় না।
আপনি যদি আলু নিয়ে স্টক ব্যবসা করতে চান তাহলে, শীতের সিজনে অনেক বেশি আলু ক্রয় করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় মজুদ করবেন। আলুর সিজনে অল্প দামে এগুলো ক্রয় করতে পারবেন। এরপরে অন্য সিজনগুলোতে মোটা অংকের মুনাফা রেখে আলুগুলো বাজারে বিক্রয় করতে পারেন।
২.কাপড়ের স্টক ব্যবসা
সাধারণত আমাদের দেশে ২টি এমন সিজন আছে যেখানে আমাদের কাপড়ে পরিবর্তন হয়। প্রথমটি হলো শীতকাল এবং দ্বিতীয়টি হল গরমকাল। সাধারণত শীতকালে আমরা যে সকল পোশাক ব্যবহার করি এগুলো গরম কালে ব্যবহার করি না। একইভাবে গরমকালে যেই পোশাকগুলো ব্যবহার করি এগুলো শীতকালে ব্যবহার করি না।
আপনি যদি কাপড়ের স্টক ব্যবসা করতে চান তাহলে শীতের শেষের দিকে অল্প দামে গার্মেন্টস কিংবা দোকান থেকে শীত বস্ত্রগুলো ক্রয় করে স্টক করে রাখবেন। পরবর্তী বছর শীতের শুরুতে এগুলো বেশি দামে বিক্রয় করতে পারবেন।
একইভাবে আপনারা গরমের শেষের দিকে অল্প দামে গরমের কাপড় গুলো ক্রয় করে রাখবেন, পরবর্তী বছর গরমের শুরুতে এগুলো বেশি দামে বিক্রয় করবেন। এভাবে করে আপনি কাপড়ের স্টক ব্যবসা করতে পারেন।
৩.পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা
পেঁয়াজ আলুর মতো একটি চাহিদা সম্পন্ন সবজি। সারা বছর রান্নার কাজে আমাদের ঘরে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়। পেঁয়াজ সারা বছর উৎপন্ন হয় না, বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় এবং স্টক ব্যবসায়ীরা এগুলো ক্রয় করে সারা বছর বাজারে বিক্রি করে।
সিজনের সময়ে এই সবজিগুলো অল্প দামে কৃষক ভাইদের কাছ থেকে ক্রয় করতে পারবেন, পরবর্তীতে বে-সিজনে ন্যায্য মূল্যে এগুলো বাজারে বিক্রয় করবেন। তবে যেহেতু পেঁয়াজ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় তাই এগুলো সংরক্ষণের জন্য বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাঃ পুরাতন কার্টুনের ব্যবসা করার নিয়ম।
৪.ধানের স্টক ব্যবসা
আমাদের দেশে প্রতিবছর অনেক ধান উৎপন্ন হায়। ধান উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। আমাদের দেশে মানুষের প্রধান খাদ্য হলো ভাত, এই ভাত আসে মূলত ধান থেকে। তাই সারা বছর বাংলাদেশে ও ভারতে ধানের চাহিদা অনেক বেশি থাকে।
আপনি চাইলে ধান নিয়ে স্টক ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ধানের সিজনে অল্প টাকায় ধান ক্রয় করে স্টক করে রাখবেন, এবং যখন ধানের সিজন চলে যাবে তখন বেশি দামে (ন্যায্য মূল্য) ধানগুলো বিক্রয় করবেন। ধান ক্রয় করার পরে এগুলো সঠিক স্থানে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
৫.সুপারির স্টক ব্যবসা
আমরা যারা গ্রাম অঞ্চলে বসবাস করে তারা অবশ্যই সুপারির ব্যবসার সাথে কোন না কোন ভাবে পরিচিত আছে। সাধারণত আশ্বিন ও কার্তিক মাসে বাংলাদেশের সুপারি উৎপন্ন হয়। এই দুই মাসে উৎপন্ন সকল সুপারি সারা বছর আমাদের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হয়।
আপনি চাইলে সুপারির সিজনে এগুলো ক্রয় করে শুকনো সুপারি তথা টাডি বানিয়ে অথবা মাটির নিচে সুপারি স্টক করে রাখতে পারেন। এবং সুপারির সিজন চলে যাওয়ার পরে মজুদ করা সুপারি গুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রয় করতে পারবেন।
লাভজনক মজুদ ব্যবসা আইডিয়া
মজুদ ব্যবসা ও স্টক ব্যবসা একই। আমরা উপরে বর্তমান সময়ের লাভজনক ও জনপ্রিয় কিছু স্টক ব্যবসা সম্পর্কে জেনেছি। চলুন আরো কয়েকটি স্টক ব্যবসা বা মজুদ ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেই।
- সিগারেট বা বিড়ির স্টক ব্যবসা।
- গমের স্টক ব্যবসা।
- ডালের স্টক ব্যবসা।
- ভুট্টার স্টক ব্যবসা।
- সরিষার স্টক ব্যবসা।
- ইট এর স্টক ব্যবসা।
- বিভিন্ন আদা ও মসলার স্টক ব্যবসা।
- বাদামের স্টক ব্যবসা।
- পাটের স্টক ব্যবসা।
- রসুনের স্টক ব্যবসা।
- চালের স্টক ব্যবসা।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, উপরে উল্লেখিত ব্যবসা ছাড়াও আরো অনেক ধরনের স্টক ব্যবসা রয়েছে। সবগুলো ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব নয়। তাই আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোন একটি স্টক ব্যবসা পছন্দ করে, পর্যাপ্ত মূলধন ও সম্পূর্ণ পরিকল্পনা নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাঃ পার্ট টাইম ব্যবসা আইডিয়া।
স্টক ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়
স্টক ব্যবসায় সফল হবার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ টিপস হল পচনশীল পণ্য এড়িয়ে চলা। এবং আপনার কাছে যত টাকা মূলধন থাকবে সব টাকা দিয়ে একই পণ্য ক্রয় না করা, অল্প করে ২-৩ ধরনের পণ্য ক্রয় করে স্টক করে রাখা।
এতে করে যদি আপনার একটি পণ্যে লোকসান হয় তাহলে অন্য একটি পণ্য দিয়ে পুষিয়ে নিতে পারবেন। স্টক ব্যবসার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মালামাল সংরক্ষণ করা সম্পর্কে জানা। যদি সঠিকভাবে মালামাল গুলো সংরক্ষণ করতেন না পারেন তাহলে এই ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি।
FAQs
স্টক ব্যবসা একটি হালাল ব্যবসা। তবে আপনি যদি দুর্ভিক্ষের সময় কিংবা মহামারী সময় পণ্য স্টক করে দাম বাড়িয়ে দেন, যেগুলো ক্রয় করতে দেশের মানুষের অসুবিধা হবে। তাহলে এটা সম্পূর্ণ হারাম হবে আপনার জন্য।
স্টক ব্যবসার জন্য পণ্যগুলো সরাসরি কৃষকদের কাছ সংগ্রহ করতে পারেন। যারা পোশাক নিয়ে স্টক ব্যবসা করতে চাচ্ছেন আপনারা সরাসরি গার্মেন্টস থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে পারেন।