Business Tips

গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া (সেরা ৬টি)

লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া গুলো সম্পর্কে এই লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বর্তমান সময়ে গ্রাম অঞ্চলে যে সকল ব্যবসা জনপ্রিয়, এবং কিভাবে ব্যবসাগুলো করবেন এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

বর্তমানে আমাদের দেশে চাকরি সোনার হরিণের মতো, আমরা চাইলেও সকলে চাকরি করতে পারিনা। তাই চাকরির বিকল্প হল ব্যবসা। ব্যবসা করে কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় এই সম্পর্কে আপনারা কম বেশি সকলেই জানেন।

বাংলাদেশে শহরের তুলনায় গ্রামের সংখ্যা অনেক বেশি, মোট জনগণের বিশাল একটা অংশ গ্রামে বসবাস করে। গ্রামে ব্যবসা করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য অবশ্যই আপনাকে আধুনিক কিছু গ্রামীণ ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানতে হবে।

শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যবসা করা অনেকটা সহজ, এখানে আপনারা অল্প কিছু মূলধন নিয়ে এবং নিজস্ব জমিতে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অপরদিকে শহরে ব্যবসা করার জন্য অনেক বেশি মূলধন প্রয়োজন হয়।

লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমানে সব থেকে লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া গুলো হল: হস্তশিল্পের ব্যবসা, সার ও কীটনাশকের ব্যবসা, কাঁচামাল উৎপাদন ও বিক্রির ব্যবসা, গরু ছাগল হাঁস মুরগি খামার, ঠিকাদারী ব্যবসা, সুপারির ব্যবসা।

গ্রামে বসবাস করে এই সকল ব্যবসাগুলো করতে পারবেন এবং ভাল পরিমানে মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। এই ব্যবসা গুলো শুরু করার জন্য আপনার অল্প কিছু মূলধন প্রয়োজন হবে। এছাড়াও গ্রামে বসে নিজস্ব বাড়িতে এসকল ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

১.হস্তশিল্পের ব্যবসা

বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র এবং ঘর সজ্জিত করার জন্য আমরা অনেক হস্তশিল্পের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করি। হাতে তৈরি জিনিসপত্রের কারুকার্য অনেক চমৎকার হয়, যার কারণে বর্তমান বাজারে হস্তশিল্পের ব্যবসা একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় ব্যবসা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

হস্তশিল্প বলতে মাটির হাড়িপাতিল তৈরি, পাটের জিনিসপত্র তৈরি, সৌখিন জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা তৈরি, নকশী কাঁথা সেলাই, বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র, মাদুর বা পাপোষ, কাগজ দিয়ে তৈরি ফুল, কাঠ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্রকে বুঝায়।

আপনার যদি এ জাতীয় কোন হস্তশিল্পে অভিজ্ঞতা থাকে, আপনি তৈরি করতে পারেন তাহলে খুব সহজেই এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। এছাড়াও আপনারা সামান্য পারিশ্রমিকে এই সকল হস্তশিল্প তৈরি করতে পারে এমন একজন লোক নিয়ে হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ রিয়েল এস্টেট ব্যবসা কি এবং কিভাবে শুরু করবেন?

২.সার ও কীটনাশকের ব্যবসা

শহরের তুলনায় সার ও কীটনাশকের ব্যবসা গ্রামে অনেক বেশি জনপ্রিয়। সাধারণত গ্রামে ধান ও কাঁচামাল জাতীয় সবজি উৎপাদন বেশি হয়। এবং এই সকল দ্রব্যগুলো উৎপাদনের জন্য সার ও কীটনাশক ঔষধ এর প্রয়োজন হয়।

তাই সার ও কীটনাশক ব্যবসা করার সব থেকে ভালো জায়গা হল গ্রামের বাজার। গ্রামের বাজারে আপনি একটি দোকান নিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। আশা করা যায় অল্প দিনের মধ্যে আপনি এই ব্যবসায় সফলতা অর্জন করতে পারবেন।

তবে সার ও কীটনাশকের ব্যবসা শুরু করার আগে, এই সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে। কোন রোগের জন্য কি ধরনের কীটনাশক প্রয়োজন এবং কোন সার ব্যবহারে কি উপকার পাওয়া যায় এগুলো জানা অতীব জরুরি।

৩.কাঁচামাল সবজি উৎপাদন ও বিক্রি

এই সেক্টরে আপনারা চাইলে দুই ধরনের ব্যবসা করতে পারেন, ১: সরাসরি কাঁচামাল উৎপাদন করে পাইকারি অথবা বাজারে খুচরা বিক্রি করা। ২: কাঁচামাল পাইকারি ক্রয় করে বাজারে খুচরা বিক্রি করা।

গ্রামের উর্বর ফসলি জমিতে কাঁচামাল সবজিগুলো চাষ করে সরাসরি গ্রামের বাজারে অথবা শহরের বাজারে খুচরা বিক্রি করতে পারেন। এছাড়াও কৃষকদের কাছ থেকে অল্প দামে/পাইকারি দামে সবজি ক্রয় করে শহরের বাজারে বিক্রি করতে পারেন।

গ্রামের সব থেকে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া এটি। এই ব্যবসা থেকে আপনারা মোটা অংকের টাকা লাভবান হতে পারবেন। গ্রাম থেকে কম দামে কাঁচামাল সবজি ক্রয় করে শহরের বাজারে অথবা ভ্যানে করে অলিতে-গলিতে বিক্রি করতে পারবেন।

৪.গরু ছাগল এবং হাঁস মুরগির খামার

বাংলাদেশে খাবারি ব্যবসা অনেক জনপ্রিয়। গ্রাম কিংবা শহর উভয় স্থানে এই ব্যবসা হয়ে থাকে তবে শহরে থেকে গ্রামে এই ব্যবসা সবথেকে বেশি লাভজনক হয়। গ্রামে নিজস্ব বাড়িতে স্বল্প খরচে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন কিন্তু শহরের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত।

গ্রামে হাঁস মুরগি অথবা গরু ছাগলের খামার করে আপনি প্রতিবছর মোটা অংকের মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। গ্রামে এই ব্যবসা করার একটি খারাপ দিক হলো সহজে ডাক্তার পাওয়া যায় না। তবে আপনাকে এই ব্যবসা শুরু করার পূর্বে গরু ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

এবং নিকটস্থ কোন পশু ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সময়ে হাঁস মুরগি ও গরু ছাগলের চাহিদা অনেক। তাই আপনারা চাইলে গ্রামে বসে হাঁস মুরগি ও গরু ছাগলের খামার করতে পারেন। হাঁস মুরগি ও গরু ছাগলের বাচ্চা ক্রয় করার জন্য কাজী ফার্ম এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

হাঁস-মুরগি পালনের ক্ষেত্রে ডিম উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন অথবা হাঁস-মুরগি বড় করে বিক্রি করতে পারেন এবং গরু ছাগল পালনের ক্ষেত্রে দুধ উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারে, অথবা অল্প দামে ছোট গরু ছাগল ক্রয় করে লালন পালন করে বড় করে বিক্রি করতে পারেন।

৫.ঠিকাদারি ব্যবসা

খুব সামান্য কিছু অংশ লোক এই ব্যবসা করে থাকে। ঠিকাদার বলতে বুঝানো হয় টাকার বিনিময়ে অন্যের কাজ করে দেওয়া। আপনি যদি গ্রামে বসবাস করেন তাহলে গ্রাম থেকে কিছু শ্রমিক নিয়ে একটি টিম গঠন করেন। পরবর্তীতে ওই টিম নিয়ে শহরের বিভিন্ন কাজ রেখে শ্রমিক দিয়ে করিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

ঠিকাদারি ব্যবসাকে কন্টেক্টারি ব্যবসাও বলা হয়। মনে করেন আপনার গ্রামের পাশের শহরে একটি পুকুর খনন করা হবে, কিন্তু ওই পুকুরের মালিক পুকুর খননের জন্য কোন আইডিয়া রাখেনা। তাই তিনি চাচ্ছে ঠিকাদার দিয়ে পুকুরটি খনন করাতে।

গুরুত্বপূর্ণ পোস্টঃ অল্প পুজিতে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া

এখন আপনি চাইলে আপনার টিম নিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা অফার করে যথাসময়ের মধ্যে তার কাজটি সম্পন্ন করে দিবেন। মনে করেন এই পুকুরটি খননের জন্য মোট বাজেট হয়েছে ২০,০০০ টাকা। এবং পুকুরটি খনন করতে সময় লাগবে ৩ দিন। এখানে সরঞ্জাম খরচ এবং অন্যান্য শ্রমিকের পারিশ্রমিক মিলিয়ে মোট আপনার খরচ হয়েছে ১৫,০০০ টাকা।

বাকি ৫,০০০ টাকা আপনার ব্যবসা। এভাবে করে কোন ধরনের ইনভেস্ট ছাড়াই ঠিকাদারি ব্যবসা করে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

৬.সুপারির ব্যবসা

গ্রাম অঞ্চলের অন্যতম আরেকটি জনপ্রিয় ব্যবসা হল সুপারির ব্যবসা। বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, লক্ষ্মীপুর, ইন্দুরকানী, পিরোজপুর, পঞ্চগড় ইত্যাদি। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই সুপারি উৎপন্ন হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের সুপারি গুলো দেশ ছাড়িয়ে বাহিরে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমানে মুনাফা অর্জন করছে।

গ্রামে বসবাসকারীদের অন্যতম একটি লাভজনক ব্যবসা হল সুপারির ব্যবসা। আপনারা সরাসরি সুপারি গাছ লাগিয়ে অথবা বাৎসরিকভাবে সুপারি বিটা ক্রয় করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে প্রথমে কিছু মুনাফা জোগাড় করতে হবে।

সুপারি গাছ লাগিয়ে ব্যবসা শুরু করার জন্য অনেক সময় প্রয়োজন, আপনারা বাৎসরিক চুক্তিতে সুপারি ভিটা ক্রয় করতে পারেন। গ্রাম অঞ্চলে অনেকেই বাৎসরিক চুক্তিতে সুপারি ভিটা বিক্রি করে। সুপারি ভিটা ক্রয় করে সুপারি সংগ্রহ করে দেশ এবং বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন।

নতুন কিছু ব্যবসার আইডিয়া

বর্তমানে গ্রামে নূতন কিছু ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে সুপারির ব্যবসা এবং ঠিকাদারি ব্যবসা ও সার ও কীটনাশকের ব্যবসা অনেক কম হয়। তাই আপনারা অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসা গুলো শুরু করতে পারেন।

সার ও কীটনাশকের ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই আপনার লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে। এই লাইসেন্স করার জন্য আপনাদের এলাকার চেয়ারম্যান/ মেয়র এর সাথে যোগাযোগ করুন। এছাড়াও সুপারির ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। প্রফেশনাল ভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন হতে পারে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি লাভজনক গ্রামের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। নিত্য নতুন ব্যবসা আইডিয়া পেতে Business of bd ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন।

FAQs

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া?

গ্রামের মেয়েদের সবথেকে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়াগুলো হল: হস্তশিল্পের ব্যবসা, গরু ছাগল এবং হাঁস মুরগির খামার তৈরি, বিভিন্ন ধরনের আচার তৈরি করা।

কৃষি ব্যবসার আইডিয়া?

কৃষি ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে কাঁচামাল উৎপাদন এবং বাজারে বিক্রি করা অন্যতম, এছাড়াও হাঁস মুরগি অথবা গরু-ছাগল পালন করা, বিভিন্ন ধরনের চারা উৎপাদন করা ইত্যাদি।

গ্রামে ব্যবসা করতে চাই?

গ্রামে ব্যবসা শুরু করার জন্য সামান্য কিছু পুঁজি প্রয়োজন। খুব সহজেই অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে উপরে আলোচিত লাভজনক গ্রামীণ ব্যবসাগুলো শুরু করতে পারেন।

Business Of BD

হাই,ব্যবসা নিয়েই আমার পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই আমার ক্যারিয়ার। ব্যবসা নিয়ে লিখতে ভালবাসি, তাই ব্যবসা নিয়েই এই ব্লগটি করা।

Related Articles

Back to top button