মুদি দোকানে লাভ কেমন বিস্তারিত জানুন
মনোহারী ব্যবসা বা মুদি ব্যবসা সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত আছে। আমাদের চারপাশে অনেক মুদি দোকান রয়েছে এবং এর চাহিদাও ব্যাপক। এই ব্যবসা শুরু করতে তেমন অভিজ্ঞতা ও মূলধন প্রয়োজন নেই। মুদি দোকানে লাভ কেমন তা জানতে পারবেন এই লেখাটির মাধ্যমে।
আপনি যদি মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করার চান সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে এই ব্যবসার লাভ সম্পর্কে জানতে হবে। কোন পণ্য থেকে আপনারা কত টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন, কিভাবে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করলে বেশি টাকা লাভ হবে তা জানতে লেখাটি সম্পূর্ণ দেখুন।
মুদি দোকান করার নিয়ম
মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করতে হবে। কিভাবে দোকান তৈরি করবেন এবং কত টাকা দোকানের জন্য ইনভেস্ট করবেন ইত্যাদি। এরপরে একটি লোকালয় পূর্ণ জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।
শহরে যদি মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। যদি গ্রামে মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি কিভাবে দোকানটি শুরু করবেন এবং কি কি মালামাল উঠাবেন এর উপরে। যদি আপনার নিজস্ব দোকান থাকে সেক্ষেত্রে অনেক মূলধন বেঁচে যাবে। দোকান তৈরীর জন্য একটি লোকালয় পূর্ণ যেখানে মানুষদের চলাচল বেশি, এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।
দোকান তৈরীর পরে দোকানের মধ্যে আকর্ষণীয় ডেকোরেশন করতে হবে, যাতে কাস্টমাররা বাইরে থেকে খুব সহজেই দোকানের সকল পণ্যগুলো দেখতে পারে। কাস্টমারদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং দোকানে বেশি মালামাল রাখার চেষ্টা করতে হবে, যাতে কোন কাস্টমার ফিরে না যায়।
মুদি দোকানে লাভ কেমন
মুদি দোকান ব্যবসায় লাভের পরিমাণ থাকে ১০% থেকে ৫০% পর্যন্ত। বিভিন্ন Product এর চাহিদা অনুযায়ী পাইকারি মার্কেটের দাম বিবেচনা করে মুদি দোকান ব্যবসায় লাভ হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যবসায় ১০-২০% শতকরা লাভ হয়।
মুদি দোকান ব্যবসায় সাধারণত অনেক ধরনের প্রোডাক্ট বিক্রি করা হয়। এবং প্রতিটি প্রোডাক্ট এর জন্য আলাদা আলাদা দাম নির্ধারণ করা হয় যার পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবসার লাভ হয়। সব প্রোডাক্ট দিয়ে সমান ভাবে লাভ করা সম্ভব নয়।
বর্তমানে মুদি দোকান ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। না হলে আমাদের আশেপাশে এত মুদি দোকান থাকত না। আমাদের প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের মুদি পণ্য প্রয়োজন হয়। মুদি দোকানের পাশাপাশি কাঁচামাল বিক্রি করলে আরো বেশি লাভ হবে, সাধারণত কাঁচামালে ৩০% থেকে ৫০% লাভ হয়।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ দৈনিক আয়ের ব্যবসা করে প্রতিদিন ১০০০ টাকা ইনকাম।
মুদি দোকানের হিসাব রাখার নিয়ম
মুদি দোকান ব্যবসার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস হল হিসাব রাখা। আপনি যদি সফল ব্যবসায়ী হতে চান তাহলে আপনাকে সর্বপ্রথম দোকানে সম্পূর্ণ হিসাব রাখা সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে। অন্যথায় আপনি কোনভাবেই মুদি দোকান ব্যবসা সফল হতে পারবেন না।
মুদি দোকানের সকল হিসাব রাখার জন্য টালিখাতা নামে একটা অ্যাপস আছে ওইটা গুগল প্লে স্টোর থেকে সম্পূর্ণ ফ্রিতে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। টেলিখাতা অ্যাপস এর সাহায্যে খুব সহজেই মুদি দোকান ব্যবসার হিসাব রাখতে পারবেন।
মুদি দোকান ব্যবসায় বিভিন্ন পণ্যের লাভের শতাংশ
চলুন কয়েকটি মুদি পণ্যের লভ্যাংশ সম্পর্কে জেনে নেই। তবে পাইকারি বাজারের দাম অনুযায়ী অথবা আপনার দোকানের স্থান অনুযায়ী এই পণ্যগুলোর লাভাংস যেকোন সময় পরিবর্তন হতে পারে।
মুদি দোকানের পণ্যের তালিকা
একটি মুদি দোকান ব্যবসার শুরু করার আগে মুদি পণ্যগুলো গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া উত্তম। আপনাদের সুবিধার্থে কিছু মুদি পণ্য নিচে টেবিল আকারে উল্লেখ করা হলো।
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ |
---|---|---|---|---|
চাল | তেল | চিনি | সেমাই ও সুজি | নুডুলস |
মসলা | রেডি মিক্স | চুইংগাম | শ্যাম্পু ও সাবান | আচার |
গোলাপ জল | লবণ | চানাচুর | ডিটারজেন্ট পাউডার | জ্যাম, জেলি |
বেকারি ও খাবার | বিস্কুট | শেভিং ক্রিম | স্কিন পাউডার | টুথপেস্ট |
তেল | ব্রাশ ও মাউথ ওয়াশ | ফেসিয়াল ও টয়লেট টিস্যু | খাবার স্যালাইন | আইসক্রিম |
চা ও কফি | আটা ও ময়দা | চিড়া, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ | তেজপাতা ও জিরা | কোল্ড ড্রিংকস ও জুস |
ইউএইচটি দুধ | শাকসবজি | ব্যাটারি | কনডেন্সড মিল্ক | কাগজ, কলম, খাতা, পেন্সিল |
আলতা | সুঁই, বোতাম, ব্লেড | ব্লেড, আইকা, গাম, গ্লু | টেস্টি হজমি | দারচিনি ও এলাচি |
কেল্ট ও মকানই | গুড়া দুধ | চুড়ি ও কানের দুল | সস | তাল মিসরি |
বিড়ি ও সিগারেট | পান জর্দা | চিপস | চকলেট | হরলিক্স |
অনলাইনে মুদি ব্যবসা
ইন্টারনেটের যুগে আপনি চাইলে অনলাইনেও মুদি দোকান ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন। অনলাইনে মুদি দোকান ব্যবসার সব থেকে বড় উদাহরণ হল chaldal.com. আপনি চাইলে নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে অনলাইনে মুদি দোকান ব্যবসা চালু করতে পারেন।
দোকানের পাশাপাশি অনলাইনে পণ্যগুলো সেল করলে আপনার বিক্রি বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যবসায় বেশি লাভ হবে। অনলাইনে মুদি ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একটি ফেসবুক পেইজ এবং একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে।
মুদি দোকান ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়
মুদি দোকান ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য আমাদের কিছু নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হবে। নিয়ম কানুন গুলো হলোঃ
- সঠিক জায়গা নির্বাচন করে দোকান স্থাপন করতে হবে।
- দোকানে আকর্ষণীয় ডেকারেশন করতে হবে।
- যত সম্ভব বেশি মালামাল রাখার চেষ্টা করতে হবে, যাতে কোন কাস্টমার অন্য দোকানে না যায়।
- সব সময় কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ গড়ে তুলতে হবে।
- বাকি বিক্রয় করা যাবে না।
- সঠিকভাবে দোকানের হিসাব রাখতে হবে।
- কাস্টমারদের থেকে অতিরিক্ত লাভ করা যাবে না।
- ভালোভাবে মার্কেটিং করতে হবে।
- দোকানে বেচাকিনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালু করতে হবে।
- অবশ্যই সৎ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
- সবার পূর্বে কাস্টমারদের প্রোরিটি দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ দৈনিক ৫০০ টাকা ইনকাম করার ব্যবসা।
মুদি দোকান ডেকোরেশন খরচ
সাধারণত একটি মুদি দোকানে আকর্ষণীয় ডেকারেশন এর জন্য কমপক্ষে ৩০,০০০ টাকা থেকে ১,০০,০০০ টাকা প্রোয়জন হয়। আপনার দোকানের পরিধি ও ডেকোরেশন এর সিস্টেম অনুযায়ী ডেকোরেশন এর খরচ নির্ধারিত হবে।
সাধারণত যারা মুদি দোকানে ডেকোরেশন করে প্রথমে তাদের সাথে পরামর্শ করে খরচ সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। আমার পরামর্শ থাকবে দোকানে এমনভাবে ডেকোরেশন করবেন যাতে কাস্টমাররা বাইরে থেকে সকল পণ্যগুলো দেখতে পারে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠ্যবৃন্দ আশাকরি মুদি দোকানে লাভ কেমন এবং মুদি দোকান ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। মুদি দোকান ব্যবসার লাভ নির্ধারণ করা হয় পণ্যের চাহিদা ও পণ্যের কোয়ান্টিটির উপরে। আপনি দোকানে যত বেশি পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন তত বেশি লাভ হবে।
FAQs
জনপ্রিয় কয়েকটি মুদি দোকানের নামের তালিকা হলো সততা মুদি পণ্য ভান্ডার, জনসঙ্গী মুদি বিতান, মা-বাবার দোয়া মুদি স্টোর, স্বপ্ন মুদি ভান্ডার, নাগরিক কর্নার মুদি বিতান, চাল ডাল মুদি ভান্ডার, গ্রোসারী গুডস পয়েন্ট, অরণ্য জেনারেল স্টোর ইত্যাদি।
যেকোন ব্যবসায়ের জন্যই সরকারি লাইসেন্স পত্র থাকা দরকার। আপনি বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন তার সবথেকে বড় প্রমাণ হলো ট্রেড লাইসেন্স। তাই যদি আপনার মুদি দোকানের ট্রেড লাইসেন্স না থাকে তাহলে পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করে ট্রেড লাইসেন্স করে নিবেন।