Business idea

পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া | Wholesale Business Ideas

বর্তমানে বেশিরভাগ তরুণরা চাকরির পিছনে দৌড়ে সময় নষ্ট না করে ব্যবসা করার মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার গঠনের চেষ্টা করছে। আপনাদের সুবিধার্থে এই লেখাটিতে আমরা পাইকারি ব্যবসা করার নিয়ম এবং লাভজনক কয়েকটি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

সাধারণত খুচরা ব্যবসার থেকে পাইকারি ব্যবসা অনেক বেশি লাভজনক হয়। বর্তমানে পাইকারি ব্যবসার তুমুল চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি সঠিকভাবে একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন তাহলে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা ইনকাম করা কোন ব্যাপার না।

গ্রামে অথবা শহরে – যেকোনো স্থানে বসে আপনারা পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পন্য ক্রয় করে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়াকে পাইকারি ব্যবসা বলা হয়।

পাইকারি ব্যবসা করার সুবিধা

পাইকারি ব্যবসার সবথেকে বড় সুবিধা হল অল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণে মুনাফা অর্জন করা যায়। পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীদের থেকে পণ্য ক্রয় করে আপনি মজুদ করে রাখবেন এবং, সময়মতো নায্য দামে পণ্যগুলো বাজারে বিক্রি করে দিবেন।

পাইকারি ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই আপনাকে বাজারের দাম ও চাহিদা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। অন্যথায় এই ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৭০% কম। পাইকারি ব্যবসার মাধ্যমে বেশি টাকা ইনভেস্ট করে অল্প সময়ে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক পরিমাণে মুনাফা লাভ করতে পারবেন।

পাইকারি ব্যবসা করার জন্য কি কি প্রয়োজন

যেহেতু আপনি অনলাইনে পাইকারি ব্যবসা সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করতেছেন, যেহেতু আপনার পাইকারি ব্যবসার প্রতি ইন্টারেস্ট আছে। একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করার জন্য তেমন জিনিসপত্র প্রয়োজন হয় না। তবে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ব্যবসার পূর্বে আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে। যেমনঃ

  • পর্যাপ্ত মূলধন।
  • TIN, EIN, ট্রেড লাইসেন্স।
  • ব্যবসার পণ্যগুলো সংরক্ষণ করার মত জায়গা।
  • কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য, শক্তি,বুদ্ধিমত্তা।
  • ব্যবসা সম্পর্কে জানার আগ্রহ।
  • মার্কেট যাচাইয়ের ক্ষমতা।

এই ৬টি বিষয় যদি ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ঠিক থাকে, তাহলে আপনি সফলভাবে একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যেকোনো ধরনের ব্যবসা দার করানোর জন্য অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম এবং দক্ষতার ব্যবহার থাকতে হবে।

পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন আইডিয়া বাছাই করতে হবে যেটা আপনার জন্য সহজ, তথা এই ব্যবসাটি আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারেন এবং পরিচালনা করতে পারবেন।

যেমন: আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মধ্যে এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো নিয়ে একটি পাইকারি ব্যবসা শুরু করা যায়, এছাড়াও আমরা এই জিনিসগুলোর সাথে অতি পরিচিত। অন্য মানুষকে এই জিনিসগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা প্রদান করতে পারবো।

এরকম পণ্যগুলো বা জিনিসগুলো বেছে নিতে হবে আপনার ব্যবসার জন্য। এই লেখাটিতে আমরা নিত্য ব্যবহৃত জিনিসগুলোর মধ্য থেকে কয়েকটি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে বের করব, আশা করি এর মধ্য থেকে আপনার পছন্দের ব্যবসা আইডিয়াটি খুঁজে নিতে পারবেন।

গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ ২০২৩ সালের লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া।

১.কসমেটিক্স সামগ্রীর পাইকারি ব্যবসা

আপনি জানলে অবাক হবেন, বর্তমান সময়ে পাইকারি বাজারে ও খুচরা বাজারে কসমেটিক্সের ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। পূর্বের তুলনায় বর্তমানে তরুণ তরুণদের কাছে কসমেটিক্স শখের জিনিস হিসেবে পরিচিত হয়েছে।

তাই অনেকে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পছন্দের কসমেটিক্স সামগ্রী ক্রয় করে। কসমেটিক্সের পণ্যগুলো থেকে আপনি ১৫% থেকে ৫০% লাভ করতে পারবেন। ছোটখাটো একটি কসমেটিক্সের ব্যবসার মাধ্যমে প্রতি মাসে ৫০,০০০ টাকা ইনকাম করা একটি সহজ বিষয়।

২.উপহার সামগ্রীর পাইকারি ব্যবসা

এই ব্যবসাটির মার্কেট ইতিমধ্যে বড় হওয়া শুরু করেছে। আপনি বিদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় উপহার সামগ্রী ইমপোর্ট করে বাংলাদেশে এনে, সেগুলো দোকানিদের কাছে পাইকারি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

পূর্বে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান অথবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে থালা-বাসন, কলসি উপহার দেয়ার প্রচলন ছিল। কিন্তু বর্তমানে মানুষ আধুনিক হওয়ায় এখন আধুনিক উপহার সামগ্রীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আপনি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি পাইকারি উপহার সামগ্রীর ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন।

৩.বাচ্চাদের খেলনার পাইকারি ব্যবসা

অল্প পুঁজি দিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন। ঢাকা সদরঘাট, চকবাজার অথবা খেলনা মার্কেট থেকে অল্প দামে পাইকারি বাচ্চাদের খেলনা ক্রয় করে এনে বিভিন্ন জেলায় দোকানীদের কাছে পাইকারি বিক্রি করা এই ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য।

সচরাচর এই ব্যবসাটি আমাদের চোখে পড়ে না। কিন্তু আপনি একটু যাচাই বাছাই করলে দেখতে পাবেন, আপনার শহর থেকে প্রতিনিয়ত কত বাচ্চাদের খেলনা (Toys) বিক্রি হয়। পর্যাপ্ত পুজি ও সঠিক আইডিয়া নিয়ে এই ব্যবসাটি শুরু করলে, আশা করি অল্পতেই ভালো সাড়া পাবেন।

৪.ইলেকট্রিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজে ইলেকট্রিক প্রোডাক্ট গুলো ব্যবহার হয়। আপনি চাইলে একটি ইলেকট্রিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ইলেকট্রিক পণ্যের মধ্যে সুইচ, লাইট, চক, ফ্যান, মাল্টিপ্লাগ, হিটার, তার, বোর্ড ইত্যাদি।

এই প্রোডাক্টগুলো অল্প দামে ক্রয় করে এনে আপনার শহরের বিভিন্ন ইলেকট্রিক দোকানগুলোতে পাইকারি দামে বিক্রি করতে পারেন। ইলেকট্রনিক পণ্যের পাইকারি ব্যবসা করে প্রতি মাসে অনায়াসে ৩০-৪০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৫.স্টেশনারি পণ্যের পাইকারি ব্যবসা

বাংলাদেশের ৮০% ছেলেমেয়েরা পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণ কাগজ, কলম, রাবার ও পেন্সিল, চক ইত্যাদি প্রয়োজন হয়। আপনি চাইলে পাইকারি স্টেশনারি পণ্যের ব্যবসা শুরু করে প্রতি মাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

বড় পাইকারি বাজার থেকে এই সকল পণ্যগুলো অল্প দামে ক্রয় করে এনে আপনার শহরের বিভিন্ন লাইব্রারিগুলোতে স্টেশনারি পণ্যগুলো পাইকারি বিক্রি করতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ব্যবসাটি অনেক কম ইনভেষ্টমেণ্ট দিয়ে শুরু করা সম্ভব।

৬.রাসায়নিক কৃষি পাইকারি ব্যবসা

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। সঠিকভাবে কৃষির কাজ করার জন্য অবশ্যই আধুনিক পদ্ধতিতে যন্ত্রপাতি ব্যবহার ও রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে। এই সকল প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি যোগান দেয়ার জন্য গড়ে উঠেছে বিশাল মার্কেট।

আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে কৃষি যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক গুলো নিয়ে পাইকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসা শুরু করতে প্রাথমিক পর্যায়ে বেশি টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। এবং সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারলে বেশ বড় অংকের মুনাফা আদায় করে নেয়া যাবে।

৭.ঘড়ির পাইকারি ব্যবসা

বিভিন্ন পাইকারি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে অথবা সরাসরি বিদেশ থেকে ঘড়িগুলো ইমপোর্ট করে, খুচরা ঘড়ির দোকানগুলোতে পাইকারি দামে বিক্রয় করতে পারেন। এই ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই আপনার একটি ট্রেড লাইসেন্স ও সু লিখিত ব্যবসা প্লান থাকতে হবে।

এছাড়াও বিভিন্ন ঘড়ির ব্রান্ডের সাথে চুক্তি করে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। ব্র্যান্ডের ও নন ব্র্যান্ডের ঘড়িগুলো প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে পাইকারি দামে ক্রয় করে খুচরা ঘড়ির দোকানগুলোতে বিক্রি করার মাধ্যমে ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন।

৮.পাইকারি কাপড়ের ব্যবসা

কাপড়ের ব্যবসার সাথে আমরা কম বেশি সকলে পরিচিত আছি এবং এই ব্যবসার লাভ সম্পর্কেও জানি। আপনি বিভিন্ন গার্মেন্টস বা তাঁতিদের থেকে অল্প দামে কাপড় ক্রয় করে বড় বড় দোকানদারের কাছে বিক্রি করতে পারেন।

কাপড়ের ব্যবসার মাধ্যমে অনায়াসে প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে এই ব্যবসা করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে ৫-৭ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। একটি জাঁকজমক সুনির্দিষ্ট জায়গা দেখে পাইকারি কাপড়ের দোকান স্থাপন করবেন।

লাভজনক কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া

উপরে বর্তমান সময়ের লাভজনক ৮টি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই ব্যবসা আইডিয়াগুলো ব্যতীত আরো অনেক লাভজনক পাইকারি ব্যবসা আছে যেমনঃ

  • ধান ও চালের পাইকারি ব্যবসা।
  • পাইকারি মুদি দোকান ব্যবসা।
  • বিভিন্ন ধরনের তেলের পাইকারি ব্যবসা।
  • পাইকারি কাঁচামালের ব্যবসা।
  • চা পাতার ডিলারশিপ ব্যবসা।
  • ফার্নিচারের ব্যবসা।
  • পাইকারি জুতার ব্যবসা।
  • পাইকারি ফুলের ব্যবসা।
  • টি-শার্টের পাইকারি ব্যবসা।
  • বিস্কুট ও চানাচুরের পাইকারি ব্যবসা।
  • পাইকারি কাপড়ের ব্যাগের ব্যবসা।
  • থ্রি পিস ও শাড়ির পাইকারি ব্যবসা।
  • মৌসুমি ফলের ব্যবসা।
  • চকলেট ও টুইংগামের পাইকারি ব্যবসা।
  • রেডিমেট গার্মেন্টস ব্যবসা।

কিভাবে পাইকারি ব্যবসা শুরু করবেন

যেহেতু এই লেখাটিতে আমরা পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করেছি, এর পাশাপাশি আমাদের জেনে নেয়া উচিত কিভাবে পাইকারি ব্যবসা শুরু করা যায়।

এই ব্যবসা করার জন্য প্রথমে মূলধন জোগাড় করে, যেকোনো একটি ব্যবসা পছন্দ করে, ওই পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এরপরে আপনাকে পণ্যের ক্রেতা খুঁজে বের করে, যথাযথভাবে মার্কেটিং করতে হবে।

  • প্রথমে মূলধন জোগাড় করুন।
  • এরপরে যেকোনো একটি ব্যবসা পছন্দ করুন।
  • যে প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করবেন, ওই প্রোডাক্ট সম্পর্কে যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করুন।
  • উক্ত প্রোডাক্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • সবসময় কম দামে প্রোডাক্টগুলো কিভাবে চেষ্টা করবেন অন্যথায় লস হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
  • প্রোডাক্ট ক্রয় এবং ক্যারিং খরচ সম্পর্কে ধারণা নিন।
  • ব্যবসায়ের জন্য সরকারিভাবে লাইসেন্স করার প্রয়োজন হতে পারে।
  • ব্যবসার জন্য নতুন নতুন মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ফলো করুন।
  • কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
  • প্রোডাক্টগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

সম্মানিত পাঠক বৃন্দ, আজকের লেখাটি এই পর্যন্ত সমাপ্ত। উপরে উল্লেখিত ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে আপনার কাছে কোন আইডিয়াটি সেরা মনে হয়েছে? কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।

FAQs

পাইকারি ব্যবসা কাকে বলে?

উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের থেকে অনেক মালামাল একসাথে কম দামে ক্রয় করে, বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সামান্য লাভ রেখে একটু বেশি দামে বিক্রি করার প্রক্রিয়াকে পাইকারি ব্যবসা বলা হয়।

সেরা পাইকারি ব্যবসা কোনটি?

বর্তমান সময়ের সব থেকে লাভজনক পাইকারি ব্যবসা হল কসমেটিক্সের ব্যবসা। এই প্রোডাক্ট গুলো অল্প দামে ক্রয় করে বেশ বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব। তাই এটিকে লাভজনক পাইকারি ব্যবসার ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে রাখবো।

Business Of BD

হাই,ব্যবসা নিয়েই আমার পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই আমার ক্যারিয়ার। ব্যবসা নিয়ে লিখতে ভালবাসি, তাই ব্যবসা নিয়েই এই ব্লগটি করা।

Related Articles

Back to top button