মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি
বর্তমানে মুদি দোকান ব্যবসা সকলের পরিচিত একটি ব্যবসা। আপনি সামান্য কিছু হিসাব-নিকাশ জানলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এই ব্যবসায় ক্ষতির পরিমাণ খুবই কম, সাধারণত এই ব্যবসায় ক্ষতি হয় না বললেই চলে।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে মুদি দোকানের ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। কিভাবে আপনারা একটি মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করবেন? এবং এই ব্যবসা শুরু করার জন্য কি কি প্রয়োজন হবে।
মুদি দোকান ব্যবসা
মুদি দোকানের সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত আছি, আমাদের গ্রামের কিংবা শহরের অলিতে গলিতে যে সকল দোকানগুলোতে আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যদি ও জিনিসপত্র পাওয়া যায় সেই সকল দোকানগুলোকে মুদি দোকান বলা হয়।
সাধারণত মুদির দোকানে চাল,ডাল, হলুদ ও মরিচ, বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত খাবার, লবণ, চা ও কফি, চিপস, চাটনি, আটা, বিস্কিট ও টোস্ট, চিনি ও ঝাল মুড়ি, তৈল জাতীয় পণ্যগুলো, পান ও বিড়ি সিগারেট, কলম ও খাতা, পানি, কোল্ড ড্রিংস জাতীয় পণ্যগুলো পাওয়া যায়।
এই ব্যবসায় লাভের তুলনায় ক্ষতি খুবই নগণ্য। আপনি যদি সামান্য হিসাব-নিকাশ জানেন ও ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে এই ব্যবসায় লাভবান হতে পারবেন। চলুন জেনে নেই কিভাবে একটি মুদির দোকান ব্যবসা শুরু করবেন।
ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করা
আপনি কিভাবে এই ব্যবসাটি শুরু করবেন, এবং এই ব্যবসায় কত টাকা ইনভেস্ট করবেন, আপনার মুদি দোকানে কি কি পণ্য বিক্রয় করবেন, আপনার মুদির দোকানটি কতটুকু জায়গা নিয়ে তৈরি হবে ইত্যাদি। এই সম্পর্কে প্রথমে পরিকল্পনা করতে হবে।
যেকোনো কাজ শুরু করার পূর্বে পরিকল্পনা করা অতি জরুরি। কেননা পরিকল্পনা ব্যতীত আপনি কোনভাবেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবেন না। ঠিক তেমনি একটি মুদির দোকান ব্যবসা শুরু করার পূর্বে পাকাপোক্ত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে ও উক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ স্টক ব্যবসার আইডিয়া।
মুদি দোকানের ব্যবসায় কত টাকা মূলধন প্রয়োজন
মুদি দোকানের ব্যবসায়ের জন্য কোন মূলধন নির্দিষ্ট করা নেই। কত টাকা মূলধন প্রয়োজন হবে এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন। যদি বড় পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করেন তাহলে অনেক বেশি টাকা মূলধন প্রয়োজন হবে।
আর যদি মিডিয়াম পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করেন এবং এই ব্যবসায়ের জন্য ২০০০-৩০০০ টাকা মাসিক চুক্তিতে দোকান ভাড়া নিতে পারেন তাহলে ৫০,০০০ টাকা দিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যদি নিজের দোকান তৈরি করে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে কমপক্ষে ১,০০,০০০ টাকা মূলধন প্রয়োজন।
মুদি দোকানের জন্য জায়গা নির্বাচন করা
ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করার পরে আপনার মুদি দোকানটি তৈরি করার জন্য একটি সঠিক জায়গা নির্বাচন করতে হবে। এমন একটি জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে অনেকগুলো ফ্যামিলি বসবাস করে এবং মানুষের প্রতিদিনের যাতায়াত হয়।
মুদি দোকানের ক্ষেত্রে একটি ভালো জায়গা নির্বাচন করতে হবে। আপনার দোকান তৈরির সময় খেয়াল রাখবেন আপনার আশেপাশে কোন মুদি দোকান আছে কিনা। যদি লোকালয় পূর্ণ স্থানে আপনি একটি মুদির দোকান তৈরি করতে পারেন এবং আশেপাশে কোন মুদি দোকান না থাকে তাহলে আপনার ব্যবসা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে।
মুদি দোকান তৈরি ও অভ্যন্তর ডিজাইন
দোকানের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করার পরে, একটু বড় দেখে একটি মুদি দোকান তৈরি করতে হবে। এরপরে আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে দোকানের অভ্যন্তর ডিজাইনের উপরে। কেননা একটি দোকানের অভ্যন্তর ডিজাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনেক প্রভাব ফেলে।
আপনার মুদি দোকানের অভ্যন্তর ডিজাইন এমনভাবে সাজাতে হবে যেন, কাস্টমাররা বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দোকানের সকল প্রোডাক্ট দেখতে পারে। এর ফলে আপনার দোকানে কি কি মালামাল আছে এই সম্পর্কে কাস্টমাররা নিশ্চিত হবে। এতে করে আপনার দোকানের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
এবং অভ্যন্তর ডিজাইনের সময় আরো একটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, মালামাল গুলো যেন আপনি খুব সহজেই খুঁজে পেতে পারেন। এতে করে আপনার সময় অপচয় কম হবে এবং কাস্টমাররা দ্রুত মালামাল গুলো তাদের হাতে পাবে। এতে করে আপনার দোকানের বিক্রি বৃদ্ধি পাবে।
মুদি দোকানের ব্যবসার লাইসেন্স করা
সাধারণত এই সকল ব্যবসায়ের জন্য তেমন বড় ধরনের লাইসেন্স প্রয়োজন হয় না। তবে গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা অর্জনে এবং সরকারি নিয়ম-কানুন মেনে আপনারা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা অফিস থেকে একটি ট্রেড লাইসেন্স করিয়ে নিবেন।
ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে বুঝা যায় এই ব্যবসায়ের সরকারের অনুমতি আছে। তথা কোনো অবৈধ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করা হয় না। গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা অর্জনে ট্রেড লাইসেন্সের কপি দোকানে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন।
মুদি দোকানের মালামাল সংগ্রহ করা
মুদি দোকানের লাইসেন্স তৈরি করার পরে আপনার প্রথম কাজ হল মালামাল সংগ্রহ করা। যদি আপনার দোকানে মালামাল না থাকে তাহলে কিভাবে ব্যবসা শুরু করবেন। মুদি দোকানের মালামাল সংগ্রহের জন্য নিকটস্থ কোনো পাইকারি দোকানের সাথে যোগাযোগ করুন।
সাধারণত শহরে মুদি মালামাল বিক্রি করে এমন অনেক পাইকারি দোকান আছে, আপনি শহরে খোঁজ নিয়ে এ সকল পাইকারি দোকান থেকে আপনার দোকানের জন্য মুদি মালামাল সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার যদি এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে সরাসরি ইমপোর্ট করাতে পারেন।
মুদি দোকান ব্যবসার মার্কেটিং
একটি ব্যবসা দাঁড় করানোর জন্য মার্কেটিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক তেমনি মুদি দোকান ব্যবসার ক্ষেত্রে বিপরীত নয়। আপনি যদি সঠিকভাবে দোকানের মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে আপনার দোকানের বিক্রি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
আপনার দোকান ওপেনিং অনুষ্ঠানে কাস্টমারদের জন্য সকল প্রোডাক্টে ১০%-২০% ছাড় ক্যাম্পেন রান করতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় আপনার দোকানের ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরি করে দোকানের মার্কেটিং করতে পারেন।
কাস্টমার ম্যানেজ করা
এরপরে যে বিষয়টা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো কাস্টমার ম্যানেজ করা। একজন কাস্টমার পার্মানেন্ট ধরে রাখার জন্য কাস্টমারের সাথে ভালো ব্যবহার এবং সে কি চায় এদিকে নজর দিতে হবে। এরপরে যত দ্রুত সম্ভব কাস্টমারদের সার্ভিস প্রদান করতে হবে।
যদি আপনি একা সকল কাজ সামলাতে না পারেন তাহলে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে দোকানের শক্তি বাড়াতে পারেন। আপনি যদি কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করে কাস্টমারদের মনে জায়গা করে নিতে পারেন তাহলে ব্যবসা আগের থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে।
মুদি দোকানের ব্যবসায় লাভ কেমন
এই ব্যবসায় আপনি একবারে অনেক টাকা লাভবান হতে পারবেন না। আস্তে আস্তে দোকানের মালামাল গুলো বিক্রি করবেন এবং সেই মালামাল থেকে (%) হারে লাভ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি এই ব্যবসায় ১,০০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করেন তাহলে ৩-৪ মাস পর প্রতিমাসে ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা লাভবান হতে পারেন।
মুদি দোকানের ব্যবসার লাভ অংশ সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার দোকানের মালামাল বিক্রির উপরে। তবে চেষ্টা করবেন সব মালামাল গুলো অন্যান্য সকল দোকানের থেকে কম দামে ও ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করার।
গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ লাভজনক কয়েকটি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা।
আমাদের মুদি দোকানের ব্যবসা সম্পর্কে শেষকথা
প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি মুদি দোকানের ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখানে একটি ব্যবসা শুরু করার সাধারণ কিছু নিয়ম-কানুন ও মার্কেটিং আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা আপনার নিজের তৈরি করতে হবে।
FAQs
মুদি দোকানের জন্য লাইসেন্স করতে সরাসরি আপনার এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা পৌরসভায় যোগাযোগ করুন।
এই ব্যবসায় প্রত্যেকটি পণ্যে শতকরা ৮% থেকে ১০% লাভ করতে পারবেন। তবে বিভিন্ন পণ্য ভেদে লাভের শতকরা কম বেশি হতে পারে।