হালাল ব্যবসার আইডিয়া | প্রতিদিন 1000 টাকা ইনকাম করুন
ইসলামিক নিয়ম কানুন অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করার জন্য হালাল ব্যবসার বিকল্প নেই। আমরা অনেকেই জানিনা কোন ব্যবসা হালাল এবং কোন ব্যবসা হারাম। এই লেখাটিতে আমরা আলোচনা করব হালাল ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে।
একজন মুসলমানের জন্য হালাল খাবার খাওয়া বা হালাল ব্যবসা করা অতি জরুরি। কেননা ইসলামে হারাম খাবার ও হারাম ব্যবসাকে সম্পূর্ণ নিষেধ। তাই একজন মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমাদের হালাল ব্যবসা করতে হবে।
হালাল ব্যবসার ধারণা সম্পূর্ণ নির্ভয় করে ব্যবসায়িক মাল, পণ্যের চাহিদা, সঠিক দাম, কার্য ক্ষমতা, উৎপাদন তারিখ, ব্যবসায়ী কতটুকু লাভ করছে এর উপরে। ইসলামিক শরিয়াহ মেনে যেকোনো ব্যবসা সঠিকভাবে পরিচালনা করলে সেটা হালাল বলে গণ্য হবে।
তবে যে সকল জিনিসগুলো ইসলামে হারাম বলা হয়েছে, সেই সকল জিনিসগুলো নিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। চলুন হালাল ব্যবসার আইডিয়া এবং হালাল ব্যবসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
হালাল ব্যবসা কি? ও হালাল ব্যবসার বৈশিষ্ট্য
ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসা পরিচালনা করাকে হালাল ব্যবসা বলা হয়। ইসলামে যে সকল নিয়ম কানুন গুলো মেনে ব্যবসা পরিচালনার কথা বলা হয়েছে, তাই হালাল ব্যবসা। ব্যবসা হালাল কিংবা হারাম এটা নির্ধারণ করবে ব্যবসার প্রোডাক্ট, ব্যবসার ধরন, মুনাফা, ব্যবসার মূলধন, পণ্যের চাহিদা, সঠিক দাম, অন্যের মেয়াদ ইত্যাদির উপরে।
এগুলো যদি সঠিক রেখে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেন তাহলে আপনার ব্যবসাকে হালাল বলা চলে। এছাড়াও হালাল ব্যবসার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো আপনার ব্যবসার মধ্যে বিদ্যমান থাকতে হবে, অন্যথায় আপনার ব্যবসা হারাম বলে গণনা করা হবে।
হালাল ব্যবসার বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ
তাকওয়া: ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্তরে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধের কথা মাথায় রাখতে হবে এবং কাজে প্রতিফলিত করতে হবে। ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয় এমন কোন কিছু ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করা যাবে না।
সত্যবাদিতা: ব্যবসায়ীকে অবশ্যই সৎ ও আদর্শবান হতে হবে। ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে কোন ধরনের অসৎ উপায় অবলম্বন করা যাবে না। কারণ নীতিবান ও সত্যবাদী ব্যবসায়ীরা শেষ বিচারের দিনে শহীদদের সাথে অবস্থান করবে।
আরো জানতে পারেনঃ কয়েকটি ৫০ হাজার টাকায় ব্যবসা আইডিয়া।
শরিয়াহ সম্পর্কে জ্ঞান: ব্যবসা শুরুর পূর্বে ব্যবসায়ীকে ইসলামিক শরিয়াহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইসলামে কোন বিষয়ে হালাল করেছে কোন বিষয়ে হারাম করেছে এই সম্পর্কে জানতে হবে। আপনি যদি এ সম্পর্কে না জানেন তাহলে একজন ভালো হুজুরের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
সালাত: আমরা ব্যবসা করি কিংবা চাকরি করি নামাজ আমাদের সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ব্যবসার ক্ষেত্রে নামাজ পড়তে দ্বিধাবোধ করে। তথা সময় অপচয় করে নামাজ পড়তে চায় না। কিন্তু একটি হালাল ব্যবসায়ের জন্য কখনোই এ কাজ করা যাবে না।
আযানের পরে প্রথমে নামাজ পড়ে নিতে হবে এরপরে ব্যবসায়ের সকল কাজ। ব্যবসায়ের আগে ইসলামিক সকল ধরনের এবাদাত অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলে আল্লাহতালা আপনার উপরে রহমত বর্ষিত করবে এবং দ্রুত ব্যবসা সফল হতে পারবেন।
পরোপকারী: ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল ব্যবসায়ের যাকাত প্রদান করা। অনেকেই যাকাত প্রদান করতে দ্বিধাবোধ করে, তারা মনে করে যাকাতের মাধ্যমে মনে হয় তাদের সম্পদ লোভ পায়। কিন্তু এটা সঠিক নয়, সব সময় আমাদের সম্পদের যাকাত প্রদান করতে হবে।
কয়েকটি হালাল ব্যবসার আইডিয়া
হালাল ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মধ্যে কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। যেগুলো সম্পর্কে আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। ইসলামে যেসকল ব্যবসার কথা উল্লেখ আছে এবং মহানবী (সঃ) এর দেখানো নিয়মকানুন অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করলে সেটা হালাল।
চলুন বর্তমানে লাভজনক এমন কয়েকটি হালাল ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেই?
১.ইসলামী ফ্যাশন হাউজ
বর্তমানে ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। আপনি ইসলামিক তরিকা মেনে একটি ইসলামী ফ্যাশন হাউজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ইসলামী ফ্যাশন হাউজে সকল ইসলামিক জামা কাপড় যেমন: পাঞ্জাবি, বোরকা, টুপি, পায়জামা ইত্যাদি বিক্রি করবেন।
২.হস্তশিল্পের ব্যবসা করা
ইসলামিক নিয়ম কানুন মেনে হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। হস্তশিল্প বলতে বোঝানো হয় হাতে তৈরি জিনিসপত্রগুলোকে। যেমন: মাটির হাড়ি পাতিল তৈরি, নকশি কাঁথা সেলাই, কাঠের আসবাবপত্র তৈরি, ফুল এবং কাগজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্রাফট তৈরি ইত্যাদি।
আরো জানতে পারেনঃ ১০০ টি ব্যবসার আইডিয়া দেখুন।
৩.গরু ছাগল এবং হাঁস-মুরগি পালন
গরু ছাগল ও হাঁস মুরগি পালন করে অতি দ্রুত নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারবেন। তবে অনেকেই গরু ছাগল ও হাঁস মুরগি মাধ্যমে অন্যের সম্পদের ক্ষতি করে এটা ইসলামের সম্পূর্ণ নিষেধ। আপনি বদ্ধ-পদ্ধতিতে যাতে অন্য মানুষের ক্ষতি না হয়, এমন উপায়ে গরু ছাগল ও হাঁসমুরগি পালন করতে পারেন।
৪.হালাল খাবার তৈরি
বর্তমানে খাবার তৈরির ব্যবসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জায়গায় নতুন নতুন অনেক রেস্টুরেন্ট তৈরি করা হয়। ২০১৯ ও ২০২০ সালের গ্লোবাল ইসলামিক ইকোনোমিক এর একটি রিপোর্টে জানানো হয় মুসলিমরা ২০১৮ সালে হালাল খাবারের উপর ১.৩ বিলিয়ন অর্থ খরচ করেছে।
এবং ২০২৪ সালের দিকে এই খরচের পরিমাণ ১.৯ বিলিয়ন উন্নত হতে পারে। আপনি চাইলে একটি হালাল খাবার তৈরির রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসার ক্ষেত্রে সব সময় কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের ভালো খাবার পরিবেশন করতে হবে।
৫.কসমেটিক্সের দোকান তৈরি
আপনি চাইলে হালাল উপায়ে কসমেটিক্সের ব্যবসা করতে পারেন। সাধারণত কসমেটিক্স এর ব্যবসায় খুব সহজেই সততা বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করা যায়। আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে এবং ক্রেতাদের সাথে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবসা করার মন মানসিকতা থাকলে কসমেটিক্সের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আরো কিছু ইসলামিক ব্যবসা আইডিয়া
- ঔষধের দোকান তৈরি
- মুসলিম ফ্রেন্ডলি ট্যুরিজম এজেন্সি তৈরি
- ইসলামিক শিক্ষাদান কেন্দ্র তৈরি
- ইসলামিক বইয়ের দোকান তৈরি
- মৎস্য চাষ করা
- মুদি দোকান তৈরি
- কাঁচামালের ব্যবসা।
- কৃষিকাজ ব্যবসা।
এই সকল ব্যবসাগুলো হালাল উপায়ে পরিচালনা করতে পারেন। প্রিয় পাঠকবৃন্দ আশা করি বর্তমান সময়ের লাভজনক ও হালাল কয়েকটি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এই সকল ব্যবসাগুলো হালাল হওয়ার কিছু শর্তাবলী আছে।
ব্যবসা হালাল হওয়ার কয়েকটি শর্তাবলী
- ব্যবসায়িক পণ্য হালাল হতে হবে।
- বিক্রয় করা নষ্ট মাল ফেরত নেওয়ার বিধান রাখতে হবে।
- কাস্টমারদের ওজনে কম দেয়া যাবে না।
- সব সময় সঠিক কথা বলে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
- কাস্টমার ও কর্মচারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।
- কোনভাবেই কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করা যাবে না।
- সুদ মুক্ত লেনদেন থাকতে হবে।
- কৃত্রিম সংকট তৈরি করা যাবে না।
- মালামাল স্টক করে কাস্টমারদের বিভ্রান্ত করা যাবে না।
- ভেজাল ও ত্রুটিযুক্ত মালামাল বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।
- এছাড়াও আপনার বিক্রয় করা পণ্যে যদি কোন ধরনের ত্রুটি থাকে তাহলে এই সম্পর্কে কাস্টমারকে আগে জানাতে হবে।
এছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো মেনে ব্যবসা করলে আপনার ব্যবসা হালাল হবে। হালাল ব্যবসা করার জন্য আপনারা আমাদের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে দেয়া সকল বিধিবিধান মেনে চলবেন।
FAQs
জি, আল্লাহ তায়ালা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। তবে অনেক ধরনের ব্যবসা আছে যেগুলো ইসলামের সম্পূর্ণ নিষেধ। এবং ব্যবসার মধ্যে কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করলে এটা হারাম বলে গণনা করা হয়।
হালাল উপায়ে ব্যবসা করার জন্য আপনাকে ইসলামিক ব্যবসা সম্পর্কিত সকল বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এবং হাদিসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) হালাল ব্যবসার বিধি-বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।