Business Plan

অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম ও সম্পূর্ণ গাইডলাইন

আপনি যদি অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এই লেখাটি দেখে অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

বর্তমানে ইন্টারনেটের অগ্রগতির ফলে ব্যবসায়িক সেক্টরে বেশ অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনেকে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেছে, অথবা তাদের ব্যবসার জন্য নতুন নতুন কাস্টমার খুঁজছে। এই সবই সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের কারণে।

যারা অনলাইনে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, তাদের অবশ্যই প্রোপার গাইডলাইন দরকার। আমি আশা করি এই লেখাটি সম্পূর্ণ দেখলে আপনারা অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন, এবং অতি দ্রুত অনলাইনে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।

অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম

প্রতিটি কাজের একটি নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে, অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং ব্যবসা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাস্টমারদের উন্নত মানের সেবা প্রদান করতে হবে।

আশা করব নিচের স্টেপগুলো সঠিকভাবে ফলো করলে, অতি দ্রুত আপনি অনলাইন ব্যবসায় ১০০% সফল হবেন।

  • মূলধন গুছিয়ে নেওয়া এবং ব্যবসার পরিকল্পনা করা।
  • চাহিদা সম্পূর্ণ বিজনেস আইডিয়া খুঁজে বের করা।
  • ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম বাছাই করা।
  • ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট তৈরি করা।
  • মার্কেটিংয়ের দিকে বেশি নজর দেয়া।
  • কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগের জন্য নিজেকে ডেভলপ করা।
  • বেশি পণ্য বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
  • ওয়েবসাইটটি পর্যাপ্ত এসইও ও খ্যাতি স্থাপন করা।
  • সকল ধরনের প্রতারণা থেকে বিরত থাকা।

এই স্টেপগুলো সঠিকভাবে ফলো করে অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনার স্বপ্নকে নিয়ে যেতে পারেন স্বপ্ন পূরণের চুরা পর্যন্ত। চলুন এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।

১.ব্যবসার পরিকল্পনা করা

যেকোন কাজ শুরু করার পূর্বে পরিকল্পনা করা অতি জরুরী। সঠিক পরিকল্পনা থাকলে দ্রুত কাজটি শেষ করা সম্ভব। তেমনি ব্যবসার ক্ষেত্রে আলাদা নয়, প্রথমে আপনাকে ব্যবসার মূলধন গুছিয়ে কি ধরনের ব্যবসা শুরু করবেন তার পরিকল্পনা করতে হবে।

সাধারণত অনলাইনে অনেকের ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করে এবং অনেকে ই-কমার্স ব্যবসা করে। আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তা নির্বাচন করতে হবে।

২.বিজনেস আইডিয়া খুঁজে বের করা

মার্কেট রিসার্চ – কথাটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত আছি। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সফলতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাওয়ার লক্ষ্যে একটি চাহিদা সম্পন্ন পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে সেরা বিজনেস আইডিয়া।

বাজারে লক্ষ লক্ষ ধরনের আলাদা পণ্য পাওয়া যায়, তবে সব পণ্য দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়? অবশ্যই না। তাই ব্যবসা আইডিয়া খুঁজে বের করার সময় বাজারে চাহিদা আছে এমন একটি ব্যবসা আইডিয়া খুঁজে বের করতে হবে। ১০ হাজার টাকায় ২৫ টি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।

এই কাজটি আপনারা বাজারে ঘুরে ঘুরে, বিভিন্ন মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করে করতে পারেন এবং অনলাইনে কি-ওয়ার্ড রিচার্জ এর মাধ্যমেও করতে পারেন। তথা বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে কি ধরনের পণ্য মানুষ ইদানিং বেশি সার্চ করে তা খুঁজে বের করতে পারেন।

৩.ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম বাছাই

একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচিত হওয়ার সবথেকে বড় ব্র্যান্ডিং হলো উক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম। যেহেতু আমরা অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাচ্ছি সেহেতু আমাদের ওয়েবসাইট থাকা জরুরি। তাই এমন একটি নাম বাছাই করতে হবে যেটির ডোমাইন ফ্রী আছে।

এছাড়াও খুব সুন্দর ও শ্রুতি মধুর একটি নাম বাছাই করতে হবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সহজ নাম রাখার চেষ্টা করবেন, এতে ইউজারদের আপনার ওয়েবসাইটটি মনে রাখতে সুবিধা হবে। এবং সব সময় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য (.com .shop) ডোমেইন নেওয়ার চেষ্টা করবেন।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুন্দর নামের তালিকা সমূহ লেখাটি দেখে, এখান থেকে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য চমৎকার একটি নাম বাছাই করতে পারেন।

৪.ওয়েবসাইট তৈরি করা এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট তৈরি করা

অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন একটি প্রফেশনাল ওয়েবসাইট। আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটটি সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে হয়, যাতে প্রথমে একজন গ্রাহক ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ওয়েবসাইটের ডিজাইন দেখে কিছু সময় উপস্থিত থাকবে।

এজন্য অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটি আধুনিক ও রুচিশীল ডিজাইনের হতে হবে। অল্প টাকায় দারুন দারুন ওয়েবসাইট তৈরি করতে Writealoy.com এদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলোঃ

  • ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড ফাস্ট থাকতে হবে।
  • মানসম্মত ও রুচিশীল ডিজাইন হতে হবে।
  • ওয়েবসাইটটি যথা সম্ভব তথ্যবহুল করার চেষ্টা করবেন।
  • একের অধিক প্রোডাক্ট যুক্ত রাখবেন।
  • বিভিন্ন ক্যাম্পেইন অফার ব্যবহার করে গ্রাহকদের ইমেইল সংগ্রহ করুন।
  • অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটি পরিপূর্ণ SEO করতে হবে।
  • ওয়েবসাইটের ইন্টারফেস ইউজার ফ্রেন্ডলি রাখুন, এর ফলে নতুন ইউজাররা খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট থেকে পণ্য অর্ডার করতে পারবে।

বিস্তারিত সকল সার্ভিস আপনারা স্বল্পমূল্যে উপরে মেনশন করা ওয়েবসাইট থেকে নিতে পারবেন। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি একই নামে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, এক্স (Twitter), থ্রেডস, রেড্ডিট, লিংকডিন সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া গুলোতে অ্যাকাউন্ট করে রাখবেন ও নিয়মিত পোস্ট করবেন।

৫.সঠিকভাবে মার্কেটিং করা

ব্যবসার প্রোডাক্ট ও ওয়েবসাইট রেডি করার পরে, আপনার প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমারদের সামনে উপস্থাপন করার জন্য সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে হবে। অনলাইনে মার্কেটিংয়ের জন্য ফেসবুক এড ক্যাম্পেইন ও গুগল এড ক্যাম্পেইন ব্যবহার করতে পারেন।

স্বল্প খরচে ফেসবুক ও গুগলে মার্কেটিং করাতে চাইলে উপরে দেওয়া এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে ডিজিটাল মার্কেটার হায়ার করে এই কাজটি করতে পারেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি ও কাস্টমার বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মার্কেটিংয়ের বিকল্প নেই।

  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং।
  • কনটেন্ট মার্কেটিং।
  • ইমেইল মার্কেটিং।
  • ভিডিও মার্কেটিং।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং।

এই কয়েক ভাবে মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনার অনলাইন ব্যবসাটিকে অতি দ্রুত বুস্ট করতে পারেন। আপনি যদি ব্যবসার সেল বৃদ্ধি করতে চান এবং আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ছড়িয়ে দিতে চান তাহলে মার্কেটিংয়ের বিকল্প নেই।

৬.কমিউনিকেশন স্কিল ডেভলপ করা

মানুষের অন্যতম হাতিয়ার তার কমিউনিকেশন স্কিল। তথা আপনি কত ভালোভাবে একজন কাস্টমারকে তার চাহিদা ও আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে পারবেন। আপনার কমিউনিকেশন স্কিল যত ভালো হবে আপনি তত দ্রুত ব্যবসায় গ্রো করতে পারবেন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন স্কিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা, সেহেতু ভালো কমিউনিকেশন স্কিল ছাড়া কোনভাবেই আপনার কোম্পানি গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন না।

৭.বিভিন্ন ক্যাম্পেইন ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা

এটি মূলত একটি মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। আপনার ব্যবসা প্রচারের লক্ষ্যে এবং নতুন নতুন গ্রাহকদের কাছে আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে।

আমরা বিভিন্ন সময় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো বড় কোম্পানিগুলো প্রায় সময়ই তাদের মালামালের ক্যাম্পেইন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই আয়োজনের মাধ্যমে তাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড প্রমোশন করে।

৮.ওয়েবসাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ করা

ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটটি প্রথমদিকে খুঁজে পেতে, অবশ্যই ওয়েবসাইটটিকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজ তথা SEO করতে হবে। এসইও বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, আপনারা যেকোন এসিও এক্সপার্ট এর সাথে যোগাযোগ করে আপনার কোম্পানির ওয়েবসাইটটিকে গুগলের প্রথম সারিতে নিয়ে আসতে পারেন।

শেষকথা

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আশাকরি অনলাইনে ব্যবসা করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে কখনোই প্রতারণার আশ্রয় নেয়া যাবে না, এটি ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম এবং আপনার ব্রান্ডটি নিমিষেই ধ্বংস করে দিবে।

সঠিক পন্থা অবলম্বন করে অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনা করলে, দ্রুত ব্যবসায় সফল হবেন। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। এবং লাভজনক বিদেশি ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।

FAQs

সবথেকে লাভজনক অনলাইন ব্যবসা কোনটি?

বর্তমানে আপনারা অনলাইনে ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। যেমন বিভিন্ন ধরনের এআই (AI) টুলস তৈরি করতে পারেন অথবা দারুন দারুন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে পারেন ইত্যাদি।

অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি?

অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কাস্টমারের বিশ্বাস ও ভরসা রক্ষা করা। আপনি যত বেশি কাস্টমারের বিশ্বাস ও ভরসা রক্ষা করতে পারবেন আপনার ব্যবসা তত দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।

Business Of BD

হাই,ব্যবসা নিয়েই আমার পড়াশোনা এবং ব্যবসা নিয়েই আমার ক্যারিয়ার। ব্যবসা নিয়ে লিখতে ভালবাসি, তাই ব্যবসা নিয়েই এই ব্লগটি করা।

Related Articles

Back to top button