মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া সেরা ১০টি
এই লেখাটিতে ঘরে বসে মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা সামাজিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য ঘরে বসে নারীরা ব্যবসা শুরু করতে পারে।
এই আর্টিকেলে এমন কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানানো হবে যেগুলো নারীরা ইসলামিক বিধান মেনে ঘরে বসে ব্যবসাগুলো পরিচালনা করতে পারবে। বর্তমানে নারী পুরুষ সমান অধিকার থাকার ফলে পুরুষের পাশাপাশি একইভাবে নারীরা চাকরি ও ব্যবসা করতে পারবে।
যেহেতু এই ওয়েবসাইটটিতে আমরা ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য শেয়ার করি তাই এই লেখাটিতেও আমরা মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া জানাবো। অনেকেই সংসারের পাশাপাশি চাকরি করার সুযোগ পায় না, কিন্তু জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের জন্য টাকা ইনকাম করা প্রয়োজন।
আপনারা এই লেখাটি দেখে এখান থেকে পছন্দ করে যেকোনো একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকুন।
লাভজনক কয়েকটি মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমানে লাভজনক কয়েকটি মেয়েদের ব্যবসা আইডিয়া হল ঘরে বসে খাবার তৈরি, কুটির শিল্প, নকশি কাঁথা সেলাই, দর্জি কাজ, বিউটি পার্লার ব্যবসা, আচার তৈরি, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ, গরু-ছাগল পালন, জুয়েলারি ব্যবসা ইত্যাদি।
এই ব্যবসা গুলো মেয়েরা ইসলামিক বিধান মেনে ঘরে বসে পরিচালনা করতে পারবে। চলুন এই ব্যবসা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
১.ঘরে বসে খাবার তৈরি
ভালো খাবার তৈরি করার প্রতিভা একটি লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করানোর হাতিয়ার। আপনি যদি ভাল খাবার তৈরি করতে পারেন তাহলে এই প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে একটি লাভজনক ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। খাবারের চাহিদা কখনো কমার নয়।
ঘরে বসে খাবার তৈরি করে অনলাইনে কিংবা বিভিন্ন ম্যাচে সাপ্লাই করতে পারেন। এছাড়াও অনেকে ঘরে বসে কেক, পিজ্জা, হালিম ইত্যাদি তৈরি করে ফুডপান্ডার মাধ্যমে ব্যবসা করতেছে। তবে এই ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য অবশ্যই আপনাকে সুস্বাদু খাবার তৈরি করা জানতে হবে।
২.কুটির শিল্প তৈরি
কুটির শিল্প বলতে বুঝানো হয়েছে হাতে তৈরি আসবাবপত্র কিংবা মাটির জিনিসপত্রগুলো। বর্তমানে হাতে কারুকাজ করা জিনিসপত্রের চাহিদা বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি অনেক সুবিধা জনক ও লাভজনক হবে। এই ব্যবসাটি ঘরে বসে পরিচালনা করা সম্ভব।
আপনার যদি কোন কুটির শিল্প তৈরীর অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করার তেমন কিছু নেই, বাজারে গেলে হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
৩.নকশি কাঁথা সেলাই
নকশি কাঁথা ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত তবে এটিকে আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো বর্তমান সময়ের সবথেকে বেশি লাভজনক ব্যবসা গুলোর মধ্যে নকশি কাঁথা অন্যতম। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে নকশী কাথার চাহিদা অপরিসীম।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আর্টিকেলঃ
আপনার যদি নকশি কাঁথা সেলাইয়ে দক্ষতা থাকে তাহলে সুন্দর সুন্দর নকশি কাঁথা তৈরি করে বাজারজাত করতে পারবেন। কাঁথার মান অনুযায়ী নকশিকাঁথা এর দাম ৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেয়েরা ঘরে বসে নকশী কাঁথা সেলাই করে একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন।
৪.দর্জি কাজ করা
এই ব্যবসাটি বেশিরভাগ মেয়েরা করে থাকে, দর্জি কাজে অভিজ্ঞতা থাকলে খুব সহজেই একটি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারবেন। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েরা বাড়িতে বসে দর্জি কাজ করে অনেক টাকা ইনকাম করছে। এটিকে আমরা একটি লাভজনক ব্যবসা বলতে পারি।
দর্জি কাজ তথা জামাকাপড় সেলাই করা, দর্জি কাজের অভিজ্ঞ মেয়েদের চাহিদা বেশি। গ্রামের বাজারে কিংবা বাড়িতে বসে ভালো সেলাইয়ের মাধ্যমে একটি দর্জি ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য তেমন বেশি মূলধন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র ১০,০০০ টাকা নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৫.বিউটি পার্লারের ব্যবসা
মেয়েদের সবথেকে বড় নেশা হলো সাজুগুজু করা। আপনি চাইলে এই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে একটি বিউটি পার্লার তৈরি করে প্রতি মাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। বিউটি পার্লার তৈরীর ক্ষেত্রে এই সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।
এই ব্যবসাটি ঘরে বসে পরিচালনা করা যায়, অলরেডি শহর কিংবা গ্রামের অনেক মেয়েরা ঘরে বসে এই ব্যবসাটি শুরু করে ইতিমধ্যে স্বাবলম্বী হয়েছে। গ্রাম অঞ্চলের থেকে শহরে এই ব্যবসাটি বেশি লাভজনক হয়। তাই আপনার যদি মেকাপ সম্পর্কে ধারণা থাকে তাহলে একটি বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
৬.আচার তৈরি করা
আচ্ছা আমরা বিভিন্ন দোকান থেকে যেই আচার ক্রয় করি এইগুলো কি মেশিনে তৈরি হয়? উত্তর হবে না, এই আচারগুলো মূলত ঘরে তৈরি হয় পরবর্তীতে প্যাকেটজাত করে বাজারে রপ্তানি করা হয়। তাই আপনার যদি আচার তৈরিতে দক্ষতা থাকে তাহলে ঘরে বসে আচার তৈরি করে বাজারজাত করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
আচার তৈরি করে ছোটখাটো একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো সম্ভব। মেয়েদের আচার তৈরিতে বিশেষ দক্ষতা থাকায় খুব সহজে এই ব্যবসা গুলো দাড় করাতে পারবেন। কেননা আমার নিজের দেখা, প্রায় ৯০% মেয়ে সুন্দরভাবে আচার তৈরি করতে পারে।
৭.হাঁস মুরগি পালন
গ্রাম অঞ্চলের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় সকল বাড়িতে মুরগি পালন করা হয়। গ্রামের তুলনায় শহরে হাঁস মুরগির পালন একটু কম তবে যেসকল মেয়েরা শহরে বসবাস করেন, আপনারা চাইলে শহরে বসেই একটি হাঁস মুরগির খামার তৈরি করতে পারবেন। তবে হাঁস মুরগি পালনের ক্ষেত্রে যারা গ্রামে বসবাস করে তারা অনেক সুবিধা বেশি পাবেন।
হাঁস মুরগি পালন করে ডিম উৎপাদন বর্তমান সময়ে একটি লাভজনক ব্যবসা। এটি শুধুমাত্র মেয়েরা নয় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অনেক ছেলেরা এই ব্যবসাকে বেছে নিয়েছি। তাই আপনি যদি ঘর সামলানোর পাশাপাশি নিজে একটি ব্যবসা করতে চান তাহলে হাঁস মুরগি পালন ব্যবসা করতে পারেন।
৮.মাছ চাষ করা
একইভাবে শহরের তুলনায় গ্রামের মেয়েরা এই ব্যবসায় অনেক বেশি সুবিধা পাবে। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে বর্তমানে শহরে বসে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হয়। বায়োফ্লক পদ্ধতি হলো বড় পানির ট্যাংকির মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ। এ সম্পর্কে ইউটিউবে অথবা গুগলে ঘাটাঘাটি করলে জানতে পারবেন।
তাই ঘরে বসে ঘরোয়া কাজের পাশাপাশি যদি একটি লাভজনক ব্যবসা করা চান তাহলে মাছ চাষ করতে পারেন। গ্রামের ক্ষেত্রে পুকুরে কিংবা ডোবায় মাছ চাষ করা অনেক সহজ হয়। শুধুমাত্র সময়মতো মাছের খাবার প্রদান ও দেখাশুনা করলে হয়।
কিন্তু যারা শহরে বসবাস করেন এবং বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে এটি একটু কঠিন হবে, কেননা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে মাছের খাবার ও দেখাশোনার পাশাপাশি সময়মতো পানি পরিবর্তন করতে হবে।
৯.গরু ছাগল পালন করা
এটি একটি কৃষিভিত্তিক ব্যবসা আইডিয়া, সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে মেয়েরা বেশিরভাগ গরু-ছাগল পালন করে। শহরে গরু ছাগলের চাষ অনেকটা কম হয় তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বড় আকারে অনেক গরু ছাগলের খামার পাওয়া যায়।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটা একটু কষ্টকর হলেও অনেক লাভজনক। এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য অনেক টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। গরু ছাগল পালনের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন সহ বাচ্চা বিক্রি করে অনেক টাকা লাভবান হওয়া যায়।
১০.জুয়েলারি ব্যবসা
মেয়েদের লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্যে জুয়েলারি ব্যবসা অন্যতম। ঘরে বসে জুয়েলারি তৈরি করা মেয়েদের স্বপ্ন বলা যায়, কেননা অনেকেই নিজেদের জন্য ঘরে বসেই বিভিন্ন ধরনের জুয়েলারি তৈরি করে। এটিকে বৃহৎ পরিসরে করে একটি ব্যবসা দার করানো সম্ভব।
ঘরে তৈরির জুয়েলারি বলতে বুঝানো হয়েছে বিভিন্ন ফুল দিয়ে তৈরি ব্যাচ, মালা ইত্যাদি এরপরে আরো অনেক ধরনের জুয়েলারি প্রোডাক্ট আছে যেগুলো মেয়েরা ঘরে বসে তৈরি করতে পারে।
মেয়েদের জন্য বিজনেস আইডিয়া
মেয়েদের জন্য বিজনেস আইডিয়া গুলোর মধ্যে সবথেকে লাভজনক হলো হাঁস মুরগি পালন করা এবং আচার তৈরি করা ও মেকআপ পার্লার তৈরি। সাধারণত এই ব্যবসা গুলো মেয়েরা ঘরে বসে খুব সহজেই পরিচালনা করতে পারবে।
এছাড়াও আরো রয়েছে ঘরে বসে খাবার তৈরি করা, নকশিকাঁথা তৈরি, দর্জি কাজ করা ইত্যাদি। এ সকল কাজগুলো করার জন্য তেমন বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না ঘরে বসে ঘরোয়া কাজের পাশাপাশি এই ব্যবসা গুলো পরিচালনা করা যায়।
মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া গুলো নিয়ে কথা বললে এজাতীয় অনেক আইডিয়া তুলে ধরা যায়। তবে সব থেকে লাভজনক বিজনেস আইডিয়া বলা সম্ভব নয় কেননা এটি নির্ভর করবে আপনার তৈরি প্রোডাক্টগুলোর মান কেমন তা যাচাই করে।
FAQs
ঘরে বসে অনলাইনে ব্যবসা করার সুযোগ থাকলে মেয়েদের ও। ঘরে বসে বিভিন্ন খাবার তৈরির পাশাপাশি নকশিকাঁথা তৈরি, আকর্ষণীয় জুয়েলারি তৈরি করে অনলাইনে বিক্রি করতে পারবে। এছাড়াও অনলাইনে মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর ব্যবসা করতে পারবে।
মহিলারা চাইলে ঘরে বসে বিভিন্ন জুয়েলারি তৈরি, আচার তৈরি করা, খাবার তৈরি ও হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল পালন সহ মাছ চাষ, বিউটি পার্লার সেবা দেওয়া সহ আরো অনেক ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে। পুরুষদের পাশাপাশি বর্তমানে মেয়েদেরও থাকতে ঘরে বসে লাভজনক ব্যবসা করার সুযোগ।