বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া
আপনি যদি নতুন একটি ব্যবসা শুরু করতে চান সেক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। লাভজনক ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চেয়ে প্রতিনিয়ত ইউটিউব ও গুগলে প্রচুর সার্চ করা হচ্ছে।
আমাদের এই আর্টিকেলটির মূল উদ্দেশ্য হলো আপনাদের বর্তমান সময়ের সব থেকে লাভজনক কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জানানো। যেই ব্যবসা আইডিয়া গুলোর মধ্য থেকে আপনার পছন্দের ব্যবসাটি খুঁজে বের করতে পারেন।
ব্যবসা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছে থাকলে এই লেখাটি আপনার অনেক কাজে দিবে। আশা করবো এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ দেখবেন।
বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা
বিভিন্ন সফল ব্যবসায়ী ও গুণী ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে এবং ইন্টারনেট রিসার্চ করে আমরা বর্তমান সময়ের সেরা ১০টি ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে বের করেছি। যেই আইডিয়াগুলোর বর্তমানে সবথেকে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে মার্কেটে বেশ ডিমান্ড রয়েছে।
নতুন ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ লোকেরা সঠিকভাবে ব্যবসা আইডিয়া যাচাই না করে, যেকোনো একটি ব্যবসা শুরু করে। পরবর্তীতে দেখা যায় ফলাফল শূন্য। প্রতিনিয়ত যে সকল লোক ব্যবসা শুরু করে তার মধ্য থেকে ৯৫% লোক ব্যর্থতার শিকার হয়।
এর একমাত্র কারণ হলো সঠিক রিসার্চ না করা। আমি আপনাদের সাজেস্ট করবো যেকোনো একটি ব্যবসা আইডিয়া সিলেক্ট করার পরে কমপক্ষে ৩০ দিন ওই ব্যবসা আইডিয়াটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। সম্ভব হলে ইতিমধ্যে যারা এই ব্যবসার মাধ্যমে সফল হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন।
তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানার চেষ্টা করুন। চলুন বর্তমান সময়ের লাভজনক ও জনপ্রিয় কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জেনে নেই।
১.হেলথ ক্লাব ব্যবসা
বর্তমানে মানুষজন স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুবই সচেতন। প্রতিনিয়ত প্রায় সব বয়সের মানুষ বিভিন্ন হেলথ ক্লাব ও জিম সেন্টারে জয়েন হচ্ছে। আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে একটি হেলথ ক্লাব ও জিম সেন্টার তৈরি করতে পারেন।
একটি হেলথ ক্লাব ও জিম সেন্টার প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করার জন্য কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা মূলধন থাকতে হবে। এবং এই ব্যবসা থেকে আপনি প্রতি মাসে অনেক টাকা ইনকাম করতে পারবেন। হেলথ ক্লাবের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি আপনার ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে।
২.হস্তশিল্প সামগ্রী বিক্রি
হস্তশিল্প সামগ্রী বলতে বোঝানো হয়েছে হাতে তৈরি নানান ধরনের জিনিসপত্র। হস্তশিল্প আমাদের দেশের ঐতিহ্য বহন করে। মেশিনে বা কৃত্রিম উপায়ে তৈরি জিনিসপত্রের থেকে বাজারে হস্তশিল্পের তৈরি জিনিসপত্রের আলাদা কদর রয়েছে।
আপনারা অনলাইন থেকে বিভিন্ন কোর্স করে হস্তশিল্পের কাজ শিখতে পারেন, অথবা অনেকে পারিবারিকভাবে হস্তশিল্পের কাজের শিক্ষা পায়। হস্তশিল্পের মধ্যে রয়েছে নকশি কাঁথা, মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র, বিভিন্ন ধরনের ক্রাফট, বেত ও কাগজ দিয়ে তৈরি জিনিস ইত্যাদি।
অনলাইনে হস্তশিল্পের সামগ্রীগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আপনার যদি এই বিষয়ে দক্ষতা থাকে সেক্ষেত্রে খুব সহজে একটি হস্তশিল্পের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি মালামাল গুলো অফলাইনে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি বিক্রি করতে পারবেন।
৩.ফটোগ্রাফি করা
অনেকেই শখের বসে ফটোগ্রাফি করে, কিন্তু আপনি কি জানেন ফটোগ্রাফি করে আপনি মাসে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন। হ্যাঁ, বর্তমানে ফটোগ্রাফি করা একটি লাভজনক ব্যবসা। আপনি বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফি করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
অথবা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি করে অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছবি বিক্রি করে টাকা ইনকাম করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন হবে একটি ভালো ক্যামেরা। বর্তমান বাজারে মোটামুটি একটি ভালো ক্যামেরা ক্রয়ের জন্য কমপক্ষে ১,৫০,০০০ টাকা বাজেট থাকতে হবে।
৪.সিজনাল ফলের ব্যবসা
সারা বছরের তুলনায় সিজনাল ফলের ব্যবসায় লাভ বেশি। আমাদের দেশে সারা বছরই কমবেশি বিভিন্ন সিজনে বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপন্ন হয়। আপনি কৃষকদের কাছ থেকে অল্প দামে এই ফলগুলো ক্রয় করে ফলের দোকানদারদের কাছে বেশি দামে বিক্রয় করতে পারেন।
অথবা ফেসবুকে একটি পেজ ক্রিয়েট করে ফেসবুকের মাধ্যমে সরাসরি কাস্টমারদের কাছে সিজনাল ফলগুলো বিক্রি করতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য ৫০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করা যথেষ্ট।
৫.ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা
ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসার সাথে আমরা কম বেশি পরিচিত আছি। ক্যাটারিং ব্যবসা বলতে মূলত খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ করাকে বুঝায়। ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে খাবার সার্ভ করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ক্যাটারিং সার্ভিস ব্যবসা শুরু করতে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা যথেষ্ট। এই ব্যবসায় সুনাম অর্জনের জন্য অবশ্যই আপনার তৈরি খাবারগুলো সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। জনপ্রিয় কয়েকটি ক্যাটারিং ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন।
৬.ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি তৈরি
অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসাগুলোর মধ্যে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি সবথেকে এগিয়ে রাখবো। কেননা বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটারের চাহিদা অনেক বেশি।
আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ জানা থাকে সেক্ষেত্রে খুব সহজেই একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি শুরু করতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি ফেসবুক পেইজ ও ওয়েবসাইট তৈরি করে এই ব্যবসাটি স্টার্ট করতে পারেন।
৭.ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা
বিবাহ অনুষ্ঠান, জন্মদিনের অনুষ্ঠান ও বড় কোন অনুষ্ঠান বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার জন্য আমরা বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সাথে চুক্তি করি। একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মূল কাজ হলো কাস্টমারের অনুষ্ঠানটি বা ইভেন্টটি সঠিকভাবে কমপ্লিট করা।
তথা ওই ইভেন্টটি ম্যানেজ করতে যা যা করা প্রয়োজন এবং কিভাবে করলে ইভেন্টটি আরো সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ হবে এই সম্পর্কে আইডিয়া প্রদান করা। আপনার যদি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে দক্ষতা থাকে সেক্ষেত্রে খুব সহজেই একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি দাঁড় করাতে পারেন।
অন্যান্য সকল ব্যবসার তুলনায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায় ইনভেস্টের পরিমাণ খুবই কম। আপনি প্রাথমিক পর্যায়ে ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা ইনভেস্ট করে এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
৮.কাস্টমাইজ প্রিন্টের টি-শার্ট বিক্রি
টি-শার্ট ডিজাইনিং সম্পর্কে আইডিয়া থাকলে এবং কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা মূলধন থাকলে কাস্টমাইজ প্রিন্টের টি-শার্ট এর ব্যবসা শুরু করতে পারেন। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের পছন্দের ডিজাইন টি-শার্টের উপর প্রিন্ট করে এগুলো বিক্রি করবেন।
বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ায় এই ব্যবসাটি তেমন জনপ্রিয় না, কিন্তু এর চাহিদা ব্যাপক। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনেও কাস্টমাইজ প্রিন্টের টি-শার্ট গুলো বিক্রি করতে পারেন। টি শার্ট ডিজাইন শিখতে পারেন টেন মিনিট স্কুল থেকে।
৯.পেট শপ তৈরি
বিড়াল, কুকুর সকলের পছন্দের পেট। আমরা বিড়াল ও কুকুরের জন্য আলাদা খাবার ও আলাদা ড্রেস সহ বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট ক্রয় করি। আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন থাকলে একটি পেট শপ তৈরি করতে পারেন।
যেখানে বিভিন্ন ধরনের পেট ও পাখির খাবার সহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট বিক্রি করা হবে, পাশাপাশি পেট বিক্রি করতে পারেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি ৯৯% ইউনিক। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইনে ও ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন।
১০.রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
বর্তমান সময়ের সবথেকে লাভজনক ব্যবসা গুলোর তালিকায় রেস্টুরেন্ট ব্যবসা অবশ্যই থাকবে। ২০২০ সালের পর থেকে এই ব্যবসাটি বেশ জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়েছে। এখন আমরা অবসর সময়ে কাটানোর জন্য অথবা ফ্যামিলি নিয়ে রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পছন্দ করি।
একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে কমপক্ষে ৭-১০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। আপনার কাছে পর্যাপ্ত মূলধন ও এই ব্যবসার প্রতি ইন্টারেস্ট থাকলে আপনি একটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
লাভজনক কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া
উপরে আমরা ১০টি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে জেনেছি। এই ব্যবসা আইডিয়াগুলো ব্যতীত আরো অনেক লাভজনক ব্যবসা রয়েছে। যেমনঃ
- পাইকারি মুদি মালামালের ব্যবসা।
- অনলাইনে প্রোডাক্ট রিসেলিং।
- কাপড়ের ব্যবসা।
- মাশরুম চাষ।
- মধু উৎপাদন।
- মোবাইল ও কম্পিউটারের ব্যবসা।
- ইলেকট্রনিক্স মালামাল বিক্রি।
- ঠিকেদারী ব্যবসা।
- বীজ ও সারের দোকান।
- বিভিন্ন প্রকার আচারের ব্যবসা।
- কফি ও চায়ের স্টল তৈরি।
- ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা।
- অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কোর্স বিক্রি।
- বিউটি পার্লারের ব্যবসা।
- কসমেটিক্স প্রোডাক্ট এর ব্যবসা।
- কোচিং সেন্টারের ব্যবসা।
- হোম মেইড ফুড তৈরি।
- বৈদেশিক ভাষা শিক্ষা ক্লাস।
- মোবাইল রিপেয়ারিং ব্যবসা।
- স্পোর্টস সামগ্রির ব্যবসা।
ব্যবসায় সফল হওয়ার উপায়
ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট উপায় নেই। তবে কিছু নিয়মকানুন আছে, যেগুলো মেনে চললে ব্যবসায় দ্রুত সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, বাকিটা উপরওয়ালার হাতে।
- লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া বেছে নেওয়া।
- ক্ষুদ্র লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করা।
- ব্যবসায় প্রতিযোগিতা কেমন তা খুঁজে বের করা।
- টার্গেট কাস্টমার সনাক্ত করা।
- মূলধন হাতে রেখে ব্যবসা শুরু করা।
- অভিজ্ঞ লোকজনের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া।
- তাড়াহুড়া করে ব্যবসা শুরু করবেন না।
- আপনাকে ধৈর্যশীল ও অভিজ্ঞ হতে হবে।
- কাস্টমারদের সাথে ভালো ব্যবহার করা।
- পন্যের গুণগত মান ভালো হতে হবে।
- সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা।
- মার্কেটিং সম্পর্কে ধারণা থাকা।
- ব্যবসায়ের সকল হিসেব সংগ্রহ করে রাখা।
- ব্যবসার ক্ষেত্রে সৎ থাকা।
- কাস্টমারদের আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন রান করা।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আজকের লেখাটি এখানে সমাপ্ত করছি। আশা করি বর্তমানে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এখান থেকে আপনার পছন্দের আইডিয়া কোনটি? কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানাবেন।
FAQs
বর্তমানে বাংলাদেশের সব থেকে লাভজনক ব্যবসা হল রেস্টুরেন্ট ব্যবসা ও কাপড়ের ব্যবসা। এই ব্যবসাগুলোর চাহিদা পূর্বের তুলনায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রামে বসে আপনি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতে পারেন। এছাড়াও হাঁস মুরগি পালন, মাশরুম চাষ, মুদির দোকানের ব্যবসা ও হস্তশিল্পের ব্যবসা করতে পারেন। বর্তমান সময়ে এই ব্যবসা গুলো অনেক লাভজনক।