লস ছাড়া ব্যবসা করার আইডিয়া ও উপায় সমূহ
ব্যবসাকে স্বাধীন পেশা বলা হয়। অনেকেই প্রথমদিকে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরবর্তীতে লসের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। আজকের এই লেখাটিতে আমরা কয়েকটি লস ছাড়া ব্যবসা সম্পর্কে জানবো।
আপনি এই ব্যবসা আইডিয়া গুলো যাচাই করে দেখতে পারেন, এই সকল ব্যবসা আইডিয়াগুলোতে লসের সম্ভাবনা খুবই কম। সত্যিকার অর্থে লস ছাড়া কখনোই কোন ব্যবসা নেই। হয়তোবা আপনি কোন কোন ব্যবসায় বেশি পরিমাণে লসের সম্মুখীন হবেন অথবা কোন কোন ব্যবসায় অল্প লস এর সম্মুখীন হবেন।
এছাড়াও যদি আপনার টাকা ইনভেস্ট করতে না হয় সেক্ষেত্রে আপনার সময় অপচয় বা লস হতে পারে। তাই বলা যায় একেবারে লস ছাড়া কোন ব্যবসা করা সম্ভব না। তবে আপনি চাইলে এই লসের পরিমাণটা কমিয়ে আনতে পারেন বিভিন্ন ব্যবসার মাধ্যমে, যেখানে আপনার ইনভেস্ট কম থাকবে।
কয়েকটি লস ছাড়া ব্যবসা আইডিয়া
যে সকল ব্যবসাগুলোতে আপনার Investment এর পরিমাণ খুবই কম থাকবে, আপনি কোন কোম্পানি ও মালিকের কাছ থেকে প্রোডাক্ট এনে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। এই সকল ব্যবসাগুলোতে সাধারণত লসের সম্ভাবনা কম থাকে।
আরো অনেক ধরনের ব্যবসা রয়েছে যেখানে আপনারা অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন। কিন্তু এই ব্যবসা গুলোতে সাধারণত লসের সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। চলুন জেনে নেই এমন কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে।
১.রিসেলিং ব্যবসা করা
রিসেলিং ব্যবসা বলতে বুঝানো হয় অন্য কারো প্রোডাক্ট আপনি রিসেলার হয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করবেন। এবং এই বিক্রির টাকার লাভের অংশ থেকে শতকরা হিসেবে উক্ত কোম্পানি আপনাকে পেমেন্ট করবে।
বর্তমানে ইলেকট্রনিক প্রোডাক্ট নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম একটি বড় রিসেলার প্ল্যাটফর্ম হল বিডি শপ। বিডি শপে আপনারা রিসেলার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এখানে প্রোডাক্ট ও ব্যবসায়ের জন্য সম্পূর্ণ ইনভেস্ট থাকবে মালিকের।
আপনি শুধুমাত্র মালিকের হয়ে বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে প্রোডাক্ট গুলো বিক্রি করবেন এর বিনিময়ে নির্ধারিত শতকরা (%) পেমেন্ট নিবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যাদের থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে রিসেলিং ব্যবসা করতে পারেন।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ মুদি দোকান ব্যবসা শুরু করার পদ্ধতি।
২.ডিলারশিপ ব্যবসা করা
এই ব্যবসার সাথে আমরা কম বেশি সকলেই পরিচিত আছি। ডিলারশিপ ব্যবসা বলতে বুঝানো হয় কোন কোম্পানির হয়ে নির্দিষ্ট এলাকা বা এরিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা। ডিলারশিপ ব্যবসার মূল কাজ হল আপনি যেই কোম্পানির ডিলারশিপ নিবেন উক্ত কোম্পানির নির্ধারিত অঞ্চল বা এলাকার ক্রয় বিক্রয় সহ যাবতীয় দায়িত্ব নেয়া।
তথা উক্ত কোম্পানির হয়ে ওই নির্দিষ্ট স্থানে আপনি প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। এই ব্যবসায় আপনি অনেক ধরনের বেনিফিট পাবেন, যেমন: আপনাকে কোন টাকা ইনভেস্ট করতে হবে না, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সকল খরচ কোম্পানি বহন করবে।
যদি কোন ধরনের মালামাল নষ্ট হয়ে যায় তার সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানির। এবং আপনার মালামাল গুলো বিক্রির জন্য আলাদাভাবে বিজ্ঞাপন দেয়ার প্রয়োজন নেই, এই দায়িত্বও কোম্পানি বহন করবে। আপনি শুধুমাত্র কোম্পানির হয়ে উক্ত এরিয়া বা জেলায় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন।
৩.মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা
বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই ব্যবসাটির প্রথমত সুবিধা হল অল্প টাকা ইনভেস্ট করে ব্যবসাটি শুরু করতে পারবেন, এবং ব্যবসায়ের জন্য নির্দিষ্ট বড় কোন স্থানের প্রয়োজন হবে না।
আপনি যেকোন গলিতে কিংবা স্কুল কলেজে সামনে একটি টেবিল ও একটি চেয়ার নিয়ে এই ব্যবসাটি পরিচালনা করতে পারেন। বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং এর উপর আস্থাশীল। তাই এই ব্যবসাটি হতে পারে আপনার জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা আইডিয়া।
মোবাইল রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসায় লস এর সম্ভাবনা খুবই কম। কেননা এই ব্যবসায় আপনি যেই টাকা ইনভেস্ট করবেন তা তুলে নেওয়ার উপায় থাকে। সব থেকে বড় বিষয় হলো এই ব্যবসায় প্রথমদিকে খুবই অল্প টাকা ইনভেস্ট করার প্রয়োজন হয়।
৪.অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয় একটি সেক্টর। এই সেক্টরটিতে আমরা আবার ব্যবসায়িক সেক্টর হিসেবে ধারণা করতে পারি। আপনি খুবই অল্প টাকা ইনভেস্ট করে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর প্রধান কাজ হল বিভিন্ন কোম্পানির হয়ে আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কাস্টমারদের কাছে প্রোডাক্ট গুলো পৌঁছে দেয়া। তথা আপনার যদি একটি বড় ওয়েবসাইট কিংবা ইউটিউব চ্যানেল অথবা ফেসবুক পেজ/ গ্রুপ থাকে তাহলে আপনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট গুলো আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে গ্রাহকদের সামনে পৌঁছে দিতে পারেন।
এবং কেউ যদি আপনার ওই লিংক এর মাধ্যমে প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তাহলে, উক্ত কোম্পানি আপনাকে শতকরা পার্সেন্টিস হিসেবে প্রফিট প্রদান করবে। বর্তমানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য অ্যামাজন অনেক জনপ্রিয়। অ্যামাজন থেকে খুব সহজেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রতিমাসে ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার ইনকাম করা সম্ভব।
৫.অনলাইন এজেন্সি তৈরি
এই লিস্টের সর্বশেষ নাম্বারে রয়েছে অনলাইন এজেন্সি ব্যবসা। বর্তমানে আপনার যদি আইটি সেক্টরের কোনো বিষয়ের উপরে দক্ষতা থাকে তাহলে খুব সহজেই একটি ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ফ্রিতে একটি এজেন্সি তৈরি করতে পারবেন।
এরপরে সামান্য কিছু টাকা খরচ করে একটি এজেন্সি ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরির ফলে গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে। এজেন্সি ব্যবসায় লস এর সম্ভাবনা খুবই কম কেননা এখানে কোন ধরনের ইনভেস্ট ছাড়াই ফেসবুকের মাধ্যমে এজেন্সি পরিচালনা করতে পারবেন।
বর্তমানে আইটি সেক্টরের মধ্যে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় হল ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যানিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও ভিডিও এডিটিং। আপনার এই বিষয়গুলোর মধ্যে যেকোন একটির উপরে দক্ষতা থাকলে একটি এজেন্সি তৈরি করতে পারেন।
সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলঃ পার্ট টাইম ব্যবসা আইডিয়া সেরা ১০ টি।
আমাদের শেষকথা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আশা করি লস ছাড়া ব্যবসা করার নিয়ম ও কয়েকটি ব্যবসা আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। লস ছাড়া যেকোনো ব্যবসা করার জন্য একমাত্র উপায় হল অন্য কোন কোম্পানি কিংবা মালিকের ইনভেস্টমেন্টে ব্যবসা পরিচালনা করা।
এছাড়াও আপনার যদি কোন স্পেসিফিক বিষয়ের উপরে দক্ষতা থাকে সেক্ষেত্রে, নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে কোন ধরনের ইনভেস্ট ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তবে একটি সফল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানোর জন্য অবশ্যই রিক্স নেওয়াটা জরুরী।
FAQs
আপনার আনুষাঙ্গিক খরচের ওপর নির্ভর করে মোবাইল রিচার্জের ব্যবসার মূলধন প্রয়োজন হবে। তবে মোটামুটি ভাবে ছোট পরিসরে একটি মোবাইল রিচার্জ এর ব্যবসা শুরু করতে কমপক্ষে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
বর্তমানে অনলাইনে সব থেকে লাভজনক এজেন্সি ব্যবসা আইডিয়া হল ডিজিটাল মার্কেটিং। আমাদের দেশে নতুন নতুন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আইটি প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও দেশের বাহিরে এই সেক্টরের প্রচুর ডিমান্ড রয়েছে।